সাংবাদিক পাইলেই গুলি করে মারব: কুবি ছাত্রলীগ নেতাদের হুমকি
কুবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০১৯, ০৫:০৬ এএম
হিমেল-জিসান। ছবি-যুগান্তর
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) কর্মরত সাংবাদিকদের গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতা শোয়েব হাসান হিমেল ও রাইহান ওরফে জিসান।
শুক্রবার রাতে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের খবর সংগ্রহ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার সামনে গেলে সাংবাদিকদের এ হুমকি দেন তারা। এসময় তারা সাংবাদিকদের অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল ও লাঞ্ছিত করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার পৌনে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম হল এবং শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ছাত্রলীগের জুনিয়র কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গেলে হলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মার্কেটিং বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শোয়েব হাসান হিমেল সাংবাদিকদের অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ শুরু করেন।
সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে কেন এসেছেন বলে চিৎকার করতে থাকেন এবং সেখান থেকে সরে যেতে বলেন।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক যুগান্তর প্রতিনিধি তানভীর সাবিক প্রতিবাদ করলে হিমেল বলেন, ‘গুলি করবো। বুলেট সাংবাদিক চিনে না, সাংবাদিক পাইলেই গুলি করে মারবো।’
এসময় হিমেলের সঙ্গে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রাইহান ওরফে জিসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সমকাল প্রতিনিধি আবু বকর রায়হানকে মারার জন্য তেড়ে আসেন।
এসময় কুবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদসহ সিনিয়র নেতারা তাদেরকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন।
তবে সাংবাদিকদের হুমকির বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা শোয়েব হাসান হিমেল প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে তিনি বলেন, ‘আমি রাগের মাথায় এটা বলেছি। আমার কাছে কোনো অস্ত্র ছিল না।’
আরেক ছাত্রলীগ নেতা জিসানকে ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। এর আগে ঘটনার দিন সন্ধ্যায় এক সাংবাদিককে চোখ তুলে নেয়ার হুমকি দেন হিমেল।
এছাড়া ছাত্রলীগ নেতা হিমেল ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ৫০২ নং কক্ষে মাদকসেবীদের নিয়ে রাতভর মাদক সেবনে মেতে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
হলে অবস্থানরত একাধিক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হিমেল তার অনুসারীদের নিয়ে নিয়মিত মাদকের আসর বসান। তার কক্ষের সামনে দিয়ে গেলে নেশাজাতীয় দ্রব্যের গন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে ছাত্রলীগ নেতা হিমেল গত ১০ এপ্রিল প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সিনিয়র এক শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করেন এবং তাকেও প্রাণনাশের হুমকি দেন।
এ নিয়ে ১৪ এপ্রিল তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
ছাত্রলীগ নেতা জিসান গভীর রাতে কাজী নজরুল ইসলাম হলের ৫০৬ নম্বর কক্ষে মাদকসেবীদের নিয়ে আসর বসান।
কয়েক মাস আগে অতিরিক্ত মদ্যপানে অসুস্থ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালেও যেতে হয়েছে এ ছাত্রলীগ নেতাকে।
হলের সিনিয়র নেতা কর্মীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
গেল সপ্তাহে বণিক বার্তার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিকে ‘মইরা গেলে কবরে গিয়া হইলেও দুইডা কোপ দিয়া আসমু’ বলে হুমকি দেন জিসান।
জানা গেছে, দুই হলের মাদকের ছড়াছড়িতে এ দুই নেতার যোগসাজশসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
হিমেল ও জিসানের বিষয়ে কুবির সিনিয়র এক ছাত্রলীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তারা দুজন সব সময় মাদকাসক্ত থাকে। বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের ইমেজ ক্ষুণ্ণ করে দুই হলে তারা মাদকের সাম্রাজ্য খুলে বসেছেন।
এ বিষয়ে কুবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ যুগান্তরকে বলেন, ‘সাংবাদিকদের হুমকি বা লাঞ্ছিত করলে তাদের দায় ছাত্রলীগ নেবে না। তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কুবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ যুগান্তরকে বলেন, ‘সাংবাদিকদের হুমকি দেয়া ছাত্রলীগের আদর্শবিরোধী।’
মাদকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন যদি কোনো ব্যবস্থা নেয় সেক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতা করব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী হলেও সাংবাদিকরা স্বেচ্ছাসেবী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কাজ করেন। তাদের সঙ্গে যারা অছাত্রসুলভ আচরণ এবং হুমকি দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ছাত্রসংগঠন, সাংবাদিক ও আমরা সবাই মিলে ব্যবস্থা নেব। শুধু প্রক্টর হিসেবে নয় শিক্ষক হিসেবেও আমি এমন ঘটনার ধিক্কার জানাচ্ছি।’