বই মেলা ২০২৪
রাজনৈতিক বইয়ের বিশেষ পাঠক
হক ফারুক আহমেদ
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
কিছু পাঠক আছেন যারা শুধুই মননশীল বই পড়েন। রাজনৈতিক বই তাদের প্রথম পছন্দ। সমসাময়িক রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, ইতিহাস, বিশ্ব রাজনীতি, কূটনৈতিক বিশ্লেষণসহ রাজনৈতিক নানা বিষয়ের এই বইগুলোর আবেদন তাদের কাছে সবচেয়ে বেশি।
একই সঙ্গে আছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নানা বই। বইমেলায় রাজনৈতিক এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই প্রকাশ হয়েছে।
বাংলা একাডেমির তথ্যমতে, শনিবার পর্যন্ত বইমেলায় নতুন বই এসেছে ২ হাজার ৭৩৯টি। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মাত্র ৫৫টি, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক ২৩টি, রাজনীতি বিষয়ক বইয়ের সংখ্যা মাত্র ২২টি। আগামীর প্রকাশক ওসমান গণি বলেন, রাজনীতি, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বইয়ের চাহিদা সারা বছর ধরেই। হুহু করে বিক্রি হওয়ার মতো নয়। কারণ বোদ্ধা পাঠকরাই এসব বইয়ের ক্রেতা। তবে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বইয়ের চাহিদা বেশি হওয়ার সুযোগ নিয়ে মানহীন কপিপেস্ট বই প্রকাশিত হচ্ছে। এসবের লাগাম টানা দরকার।
রাজনীতি বিষয়ক বইয়ের মধ্যে কথাপ্রকাশ থেকে এসেছে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ‘সাতচল্লিশের দেশভাগে গান্ধী ও জিন্নাহ’, প্রথমা থেকে বদিউল আলম মজুমদারের ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রাজনীতি’, মহিউদ্দিন আহমদের ‘প্লাবনভূমির মহাকাব্য : পলাশী থেকে পাকিস্তান’, জিয়াউদ্দিন চৌধুরীর ‘দুই জেনারেল হত্যাকাণ্ড : ১৯৮১-র ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থান’, কথাপ্রকাশ থেকে ইমতিয়ার শামীমের সম্পাদনায় ‘গোপন রাজনীতির গল্প’, ঐতিহ্য থেকে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও আবুল হাসনাতের সম্পাদনায় ‘নব্বুই-এর অভ্যুত্থান’, শোভা প্রকাশের ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস ও রাজনীতি’, পুঁথিনিলয় থেকে বেরিয়েছে ‘বাংলাদেশের নেতৃত্বের পরম্পরা ও উন্নয়ন’, নক্ষত্র প্রকাশনী এনেছে ‘রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন’, আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘স্বদেশ সংলাপ ও বিশ্ববীক্ষণ, সহে না মানবতার অবমাননা এবং সমালোচনা।’
রাজনীতি নিয়ে লেখা বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বই দিয়ে সাজানো হয়েছে ছাত্রলীগের স্টল ‘মাতৃভূমি’। স্টলটির সংগ্রহে রয়েছে রাজনৈতিক অসংখ্য বই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বিভিন্ন বই রাখা হয়েছে এখানে। উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, আমার দেখা নয়াচীন, কারাগারের রোজনামচা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লেখা ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’, ‘নির্বাচিত প্রবন্ধ’, ‘আমাদের ছোট রাসেল সোনা’, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকায় লেখা ‘জয় বাংলা : সাক্ষাৎকার ও আলাপচারিতা’।
অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির বই দিয়ে সাজানো হয়েছে ইতি প্রকাশনার স্টল। এই প্রকাশনীতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ‘আমার স্বপ্ন আমার দেশ’, খালেদা জিয়াকে নিয়ে আব্দুস সালামের ‘ঘর থেকে রাজপথ’, ‘একজন জিয়া, জিয়াকে যেমন দেখেছি’।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি নিয়ে বেশি বই প্রকাশ করেছে শোভা প্রকাশ। বিশেষ করে তারেক শামসুর রেহমানের বিশ্বরাজনীতির ১০০ বছর, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রাজনীতি, ইরান-সংকট ও উপসাগরীয় রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতিকোষ, করোনা-পরবর্তী বিশ্বরাজনীতি, ভারত-চীন দ্বন্দ্ব, চীন বিপ্লবের ৭০ বছর, নয়া বিশ্বব্যবস্থা ও সমকালীন আন্তর্জাতিক রাজনীতি ইত্যাদি।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে কথাপ্রকাশ থেকে এসেছে মুনতাসীর মামুনের ‘১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শান্তি কমিটি গঠন ও তৎপরতা’ ও সালেক খোকনের ‘১৯৭১ : খেতাবপ্রাপ্ত ত্রিশ বীর’। প্রথমা থেকে ‘১৯৭১ শিলিগুড়ি সম্মেলন : প্রবাসী সরকারের সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের সভা’, ঐতিহ্য থেকে আফসান চৌধুরী ‘১৯৭১ : আন্তর্জাতিক পরিসন’, আসাদ চৌধুরীর ‘একাত্তরের ৭১ কবিতা’। সুবর্ণ প্রকাশনী থেকে মুনতাসীর মামুনের ‘১৯৭১ : বিশ্ব জনমত তৈরিতে শরণার্থীর ভূমিকা’। জার্নিম্যান বুকস থেকে বীরপ্রতীক আলমগীর সাত্তারের বয়ানে ‘কিলোফাইট’, ফারুক আলমগীরের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক স্মৃতিকথন ‘ঢাকা টিভি স্টেশনের অবিস্মরণীয় দিনগুলো’। আগামী প্রকাশনী থেকে এসেছে ড. এম আলীমের ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ’, সুজন বড়ুয়ার ‘সূর্য উঠার সময়’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধের কিশোর উপন্যাসসমগ্র’, মোনায়েম সররকারের ‘মুক্তিযুদ্ধের কত স্মৃতি কত কথা’, রফিকুর রশীদের ‘দাঁড়াবার সময়’। অনিন্দ্য প্রকাশ এনেছে সুরমা জাহিদের ‘বীরাঙ্গনাদের ভয়াবহ স্মৃতিকথা’। তাম্রলিপি এনেছে আশফাকুজ্জামানের ‘মুক্তিযুদ্ধের কণ্ঠস্বর : স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র’। অনন্যা থেকে এসেছে মো. আজিজুল আলমের ‘স্বাধীনতা যুদ্ধের ১০ নম্বর সেক্টর : সাগর সীমানায় অজেয় সেনা বাংলাদেশের নৌ কমান্ডো কাহিনি’। পাঠক সমাবেশ থেকে এসেছে মোস্তফা সেলিমের ‘সাপ্তাহিক মুক্তবাংলা’। বেহুলা বাংলা থেকে সুলতানা কামালের ‘বাংলাদেশের প্রথম হাসপাতাল’।
কথাপ্রকাশের ব্যবস্থাপক ইউনুস আলী বলেন, আমাদের প্রকাশনীতে প্রবন্ধ বা ননফিকশন বই বেশি। তাই আমাদের প্রকাশনীতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বইয়ের বিক্রি ভালো। প্রবীণ ও গবেষকদের পাশাপাশি তরুণরাও বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বইগুলো বেশি কিনছেন।
নতুন বই : কাকলী প্রকাশনী থেকে প্রকাশ হয়েছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘স্মৃতি সমগ্র’, বাংলা একাডেমি থেকে জালাল ফিরোজের ‘বাঙালির জাতিগঠন বঙ্গবন্ধুর পত্রাবলি’, কথাপ্রকাশ থেকে মুনতাসীর মামুনের ‘১৯৭১ : মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শান্তি কমিটি গঠন ও তৎপরতা’, তাম্রলিপি থেকে এসেছে মাহবুবুর রহমান তুহিনের ‘চেক বই’।
বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্মরণ : মোহাম্মদ রফিক এবং স্মরণ : খালেক বিন জয়েনউদদীন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যথাক্রমে আলতাফ শাহনেওয়াজ এবং সুজন বড়ুয়া। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শামীম রেজা, শোয়াইব জিবরান এবং আসলাম সানী। সভাপতিত্ব করেন আবুল মোমেন।
বই-সংলাপ ও রিকশাচিত্র প্রদর্শন মঞ্চের আয়োজন : এই মঞ্চে শনিবার বিকালে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত মুহম্মদ মোজাম্মেল হক রচিত মুক্তিযুদ্ধ ও আলোকচিত্র বই বিষয়ে লেখকের সঙ্গে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান : সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মাকিদ হায়দার, আশিক আকবর, মাহবুব আজীজ, বীরেন মুখার্জী, আরেফিন রব, কাফি শেখ, সালেহ মুজাহিদ এবং তিথি বালা। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী নূরুল হাসনাত জিলান, লুৎফুন নাহার লতা, নিমাই মণ্ডল, সাহিত্য ভঞ্জ চৌধুরী। এ ছাড়াও ছিল আসাদুজ্জামান মান্নার পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন ‘কুষ্টিয়া আবৃত্তি পরিষদ’, মাসুম হুসাইনের পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন ‘পরম্পরা নৃত্যালয়’, মাহবুব রিয়াজের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু শিল্পীগোষ্ঠী’ এবং হাসান আবদুল্লাহ বিপ্লবের পরিচালনায় ‘ঘাসফুল’-এর পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ইয়াকুব আলী খান, সালাউদ্দিন আহমদ, সুজিত মোস্তফা, নফিসা মাহজাবিন, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, তাপসী ঘোষ, বর্ণালী সরকার, ফারহানা আক্তার এবং ঝর্ণা রায় ভাবনা।