ফাইল ছবি
বলিউড অভিনেতা সাইফ আলি খানের ওপর হামলার ঘটনার ১০ দিন কেটে গেছে। গত ১৫ জানুয়ারি গভীর রাতে নিজের বাড়িতে দুষ্কৃতকারীর হামলায় আহত হন অভিনেতা। ডাকাতিতে বাধা দিতে গেলে ছয়বার ছুরিকাঘাত করা হয় পতৌদি পরিবারের নবাবকে। রক্তাক্ত অবস্থায় এক ব্যবসায়ী বন্ধু ও শিশুপুত্র তৈমুরকে সঙ্গে নিয়ে অটোয় চড়ে লীলাবতী হাসপাতালে পৌঁছেন সাইফ। পাঁচ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শিরদাঁড়া সোজা রেখে আপাতদৃষ্টিতে একজন সুস্থ মানুষের মতোই বাড়ি ফিরে আসেন তিনি। যদিও তার শরীরের একাধিক স্থানে ব্যান্ডেজ দেখা গেছে।
এর পরেই সাইফ-কারিনার পরস্পরবিরোধী বক্তব্য— প্রকৃত অপরাধীকে ধরতে গিয়ে পুলিশের একের পর এক ভুল পদক্ষেপ এবং হাসপাতালের চিকিৎসকদের ছুরিকাঘাতের দাবি নস্যাৎ করে ফরেনসিক তদন্ত রিপোর্টে ভোঁতা অস্ত্রের আঘাতের মতো কথাসহ একাধিক পরস্পরবিরোধী তথ্য নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, যার সদুত্তর মেলেনি খান পরিবার, পুলিশ কিংবা লীলাবতী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে। যেন প্রত্যেকে নীরবতা পালনের শপথ নিয়েছেন। যে প্রশ্ন আসছে—
১. হাসপাতালের চিকিৎসক ভার্গবী পাটিল বান্দ্রা পুলিশের কাছে যে তথ্য দিয়েছিলেন, তাতে সাফ বলা হয়েছে— ১৬ জানুয়ারি গভীর রাত ২টা ৩০ মিনিট নাগাদ সাইফের ওপর হামলা হয়। হামলার পর বাসভবন থেকে মাত্র ১০ মিনিট দূরের লীলাবতী হাসপাতালে যখন তিনি পৌঁছান, তখন ভোর ৪টা ১১ মিনিট। রক্তাক্ত অবস্থায় দেড় ঘণ্টা বাড়িতে কী করছিলেন সাইফ?
২. হাসপাতালের দাবি— ছুরির ২.৫ ইঞ্চি অংশ মেরুদণ্ডের কাছে আটকে ছিল। ওই অবস্থায় সাইফ কীভাবে এতক্ষণ ঘরে বসে থাকতে পারলেন?
৩. অটোচালকের বয়ান অনুযায়ী, অভিনেতার সঙ্গে একজন পুরুষ এবং একটি শিশু ছিল। শিশুটি সম্ভবত অভিনেতার ছেলে তৈমুর আলি খান। কারিনা কেন সাইফকে এভাবে ছেড়ে দিলেন? কেন অটোয় চেপে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল সাইফকে? কেনইবা হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বন্ধুকে ফোন করে ডাকতে হয়েছিল অভিনেতাকে?
৪. চালক সাইফকে যে সময়ে লীলাবতী হাসপাতালে নিয়ে যান এবং হাসপাতালে ভর্তির যে সময়সূচি, তাতে বিস্তর ফারাক।
৫. কারিনার বয়ান অনুযায়ী, তিনি ঘটনার রাতে তারকা বন্ধুদের সঙ্গে রাতপার্টিতে গিয়েছিলেন। ফেরার পর একাদশ তলের শয়নকক্ষে তিনি এবং সাইফ ছিলেন। নিচের তলা থেকে আচমকা চিৎকার শুনে ছুটে যান। ছোট ছেলে জেহকে দুষ্কৃতকারী কব্জা করার চেষ্টা করছে দেখে সাইফ বাধা দেন। শিকার ফসকে যাচ্ছে দেখে তাকে আঘাত করেন হামলাকারী। কিন্তু এর পর কারিনা সাইফকে নিয়ে হাসপাতালে দৌড়ননি। বরং তিনি ছিলেন ছোট ছেলের কাছে। তৈমুর গিয়েছিল সাইফের সঙ্গে। কিছুক্ষণের মধ্যেই কারিনার দিদি অভিনেত্রী কারিশমা কাপুর এসে বোন আর বোনপোকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যান! দিদির কাছে জেহ নিরাপদ জেনেও কেন হাসপাতালে না গিয়ে দিদির বাড়িই চলে গেলেন কারিনা?
৬. হাসপাতালের দাবি— ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত সাইফ। চিকিৎসকরা ছুরির ভাঙা অংশের ছবিও দেখিয়েছেন। এদিকে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ বলছেন— ভোঁতা অস্ত্রের আঘাতে আহত সাইফ। কোনটি সত্যি?
৭. জেহর দেখভালকারী পরিচারিকা প্রথম আততায়ীর মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছেন— আততায়ীর হাতে লাঠি ছিল। তা হলে কি সাইফের শরীরে ছুরি নয়, লাঠির আঘাত?
৮. কারিনা কি সাইফকে রক্ষা করার আদৌ চেষ্টা করেছিলেন? উত্তর ‘হ্যাঁ’। তা হলে তার শরীরে কোনো আঘাত নেই কেন? যেখানে আক্রমণের সময় পরিচারিকাও অল্প বিস্তর আহত হয়েছিলেন! অভিনেত্রী কি সেই সময় নেশাচ্ছন্ন ছিলেন? আদতে কিছুই করার মতো অবস্থায় ছিলেন না?
এসব প্রশ্নের কোনো জবাব মিলছে না ঘটনার সঙ্গে জড়িত কারও থেকে। কোন রহস্য লুকোতে এ নীরবতা? কেনইবা ১০ দিন পরও একটি ঘটনা ঘিরে এত ধোঁয়াশা? কে জবাব দেবে?