
প্রিন্ট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:০৯ পিএম

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১৩ পিএম

ছবি:সংগৃহীত
আরও পড়ুন
ফিলিস্তিনের গাজা ও রাফায় ইসরাইলি বর্বরোচিত নৃশংসতার প্রতিবাদ এবং নির্যাতিত ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বৃহস্পতিবার রাজধানীতে প্রতিবাদ ও সংহতি র্যালি করেছে বিএনপি। এতে লাখো মানুষের ঢল নামে। র্যালি-পূর্ব সমাবেশে বিএনপি নেতারা ফিলিসি্তনে গণহত্যার বিরুদ্ধে মুসলিমবিশ্বের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের আহ্বান জানান।এ সময় নেতারা ফিলিস্তিনিদের পাশে থাকার দলের অঙ্গীকারের কথা দৃপ্তকণ্ঠে ব্যক্ত করেন।
বিএনপির এ কর্মসূচি বিকাল ৪টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর থেকেই নয়াপল্টনে নেতাকর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। সাধারণ মানুষেরও অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। হাতে প্ল্যাকার্ড, ফিলিসি্তনের পতাকা ও কালো ব্যানার নিয়ে নেতাকর্মীদের স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয় নয়াপল্টন এলাকা। র্যালিটি নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে কাকরাইল, শানি্তনগর, মালিবাগ, মগবাজার, বাংলামোটর হয়ে কাওরান বাজারের সোনারগাঁও হোটেলের মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।
তবে পুরো সড়কে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেওয়ায় সোনারগাঁও
হোটেলের মোড়ে র্যালির সম্মুখভাগ পৌঁছালেও তখনো শেষভাগ ছিল নয়াপল্টনেই। পথজুড়েই
ছিল প্রতিবাদী স্লোগান। বিএনপির নেতাকর্মীরা ‘তুমি কে আমি কে, ফিলিসি্তন-ফিলিসি্তন’, ‘দুনিয়ার মুসলিম এক হও লড়াই করো’, ‘ফিলিসি্তন ফিলিসি্তন, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ', ‘ফিলিসি্তনে হামলা কেন, জাতিসংঘ জবাব চাই' প্রভৃতি
স্লোগান দেন। বিএনপির নেতারা জানান, এ কর্মসূচির মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে বার্তা দেওয়া
হয়েছে গণহত্যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশি জনগণ ফিলিসি্তনের পাশে
আছে।
বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের উদ্যোগে এ প্রতিবাদ ও সংহতি কর্মসূচি বিকাল ৪টায় নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষপ্তি সমাবেশের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। শুরুতে গাজায় ইসরাইলি নৃশংসতায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া এবং আহতদের আশু সুস্থতায় বিশেষ দোয়া করা হয়।
র্যালিপূর্ব সমাবেশে বিএনপির
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, অন্য যে কোনো সভার চেয়ে এই প্রতিবাদ মিছিল
অস্বাভাবিক বড় হয়েছে। বিএনপির পাশাপাশি ধর্মপ্রাণ মুসলি্লরাও এতে অংশ নিয়েছেন। ফিলিসি্তনে
যা ঘটছে, তা শুধু তাদের ধ্বংস নয়, এটা বিশ্ব মুসলমানদের নিঃশেষ করার একটি ষড়যন্ত্র
বলে উলে্লখ করেন মির্জা আব্বাস। মুসলিমবিশ্ব কার্যকরভাবে ঐক্যবদ্ধ হলে ইহুদিরা এতটা
সাহস দেখাতে পারত না বলে অভিমত দেন তিনি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফিলিসি্তনে চলমান সহিংসতার
ছবি দেখলে সহ্য করা যায় না বলেও উলে্লখ করেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ইরাক-ইরান যুদ্ধের
সময় যেমন জিয়াউর রহমান ভূমিকা রেখেছিলেন, তিনি বেঁচে থাকলে আজ ফিলিসি্তনের পক্ষে কার্যকর
উদ্যোগ নিতেন এবং ইসরাইল এমন সহিংসতা চালানোর সাহস পেত না। মির্জা আব্বাস বলেন, শুধু
ইসরাইলে নয়, আমাদের প্রতিবেশী দেশেও মুসলমানদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে। আমরা সেটার প্রতিবাদ
করি না। আমার রাষ্ট্র প্রতিবাদ করে না, আমরাও প্রতিবাদ করি না। আমরা এটার প্রতিবাদ
করতে চাই। তিনি আরও বলেন, সারা বিশ্বের মুসলমানদের ওপর যেখানে অত্যচার হবে, আমরা তার
বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করব। প্রতিরোধ গড়ে তোলার চষ্টো করব।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ফিলিসি্তনে
যুগের পর যুগ নৃশংস হত্যাকাণ্ড চলছে। নারী-পুরুষ কেউ রেহাই পাচ্ছে না। এটা সরাসরি মানবতাবিরোধী
অপরাধ। দেশের সাধারণ মানুষ দলমতনির্বিশেষে ফিলিসি্তনের পক্ষে; কিন্তু বুদ্ধিজীবীদের
থেকে তেমন কোনো অবস্থান দেখা যাচ্ছে না। জাতিসংঘও নিষ্ক্রিয় একটি ঠুঁটো জগন্নাথ
হয়ে গেছে।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন,
স্বাধীনতা দিবসে জিয়াউর রহমান ফিলিসি্তন নেতা ইয়াসির আরাফাতকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
সেই থেকেই বিএনপি ফিলিসি্তনের জনগণের সংগ্রামের পক্ষে অবস্থান নিয়ে এসেছে। আজ গাজা
যেন অবরুদ্ধ খাঁচা, যেখানে শিশু ও নারীদের ওপর বর্বরতা চালানো হচ্ছে। ইসরাইলি বাহিনীকে
প্রতিহত করতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ দরকার।
ফিলিসি্তনের পক্ষে সংহতি জানিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে
ভাঙচুর ও লুটপাটকারীদের বিষয়ে হুঁশিয়ারি দেন নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, যারা বিশৃঙ্খলা
সৃষ্টি করবে, তারা ইসরাইলের পক্ষে কাজ করছে বলেই মনে করব। তাদের প্রতিহত করতে হবে,
তবে কোনোভাবেই মারধর নয়, পুলিশের হাতে তুলে দিতে হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিশ্বের
কয়েকটি পরাশক্তির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনে বহু আগেই ফিলিসি্তনে গণহত্যা শুরু হয়েছে।
আজ ফিলিসি্তনের মানুষ নিজেদের দেশেই পরবাসী। অথচ মুসলিমবিশ্বের মোড়লদের কার্যকর কোনো
ভূমিকা নেই। তারা মুখ খুলছে না, অবস্থান নিচ্ছে না।
গাজায় গণহত্যা বন্ধে বিশ্বব্যাপী আন্দোলন চলছে;
কিন্তু কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না বলে উলে্লখ করেন সালাহউদ্দিন আহেমদ।
তিনি বলেন, আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে এই নির্মমতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং গণহত্যা
বন্ধের জোর দাবি করছি। সালাহউদ্দিন অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ ইসরাইলকে পরোক্ষভাবে
স্বীকৃতি দিয়েছে এবং বিরোধী দলের ওপর নিপীড়নের সঙ্গে ইসরাইলের কাছ থেকে আড়ি পাতার
যন্ত্র কিনেছে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুর
সভাপতিত্বে র্যালিপূর্ব সংক্ষপ্তি সমাবেশে সঞ্চালনা করেন কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক
সুলতান সালাউদ্দীন টুকু। বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ঢাকা
মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক প্রমুখ। আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান
আহমেদ আজম খান, আবদুস সালাম পিন্টু, চেয়ারপারসনের উপদষ্টো আবদুস সালাম, আবুল খায়ের
ভুঁইয়া, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, যুগ্ম মহাসচিব
হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহীদ উদ্দিন চেৌধুরী এ্যানি, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ,
কেন্দ্রীয় নেতা রকিবুল ইসলাম বকুল, ডা. রফিকুল ইসলাম, শামীমুর রহমান শামীম, মোস্তফিজুর
রহমান বাবুল, সাইফুল আলম নিরব, যুবদলের আবদুল মোনায়েম মুন্না, নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক
দলের এসএম জিলানি, রাজীব আহসান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শহিদুল ইসলাম বাবুল,
মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, সুলতানা আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত,
সাদেক আহমেদ খান, তাঁতীদলের আবুল কালাম আজাদ, মত্স্যজীবী দলের আবদুর রহিম, ছাত্রদলের
রাকিবুল ইসলাম বকুল, নাছিরউদ্দীন নাছির প্রমুখ।