Logo
Logo
×

বিএনপি

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নামে এখনো যেসব মামলা বহাল

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:১৪ পিএম

খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নামে এখনো যেসব মামলা বহাল

সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামে ২টি এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে এখনো ৪টি মামলা বহাল আছে।এরমধ্যে খালেদা জিয়ার নামে কুমিল্লায় একটি হত্যা ও একটি বিস্ফোরক মামলা রয়েছে।আর তারেক রহমানের নামে রয়েছে দুদকের করা জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপনের মামলা, মানি লন্ডারিংয়ের মামলা ও ঢাকার বাইরে ২টি মানহানির মামলা।

বিগত সেনাসমর্থিত ওয়ান-ইলেভেন সরকার এবং পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সারা দেশে এখন পর্যন্ত ৩৭টি এবং তার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সারা দেশে ৮৩টি মামলা করার তথ্য মিলেছে।ইতোমধ্যে খালেদা জিয়ার ৩৫টি ও তারেক রহমানের ৭৯টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। মামলাগুলোর মধ্যে অনেকগুলো খারিজ এবং কিছু মামলায় খালাস দেওয়া হয়। মামলা চলার মতো উপাদান না থাকায় কয়েকটি মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

পেন্ডিং মামলাগুলোর সঙ্গে বিবাদী পক্ষের সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা যুগান্তরকে জানিয়েছেন, অবশিষ্ট ছয়টি মামলা থেকে অব্যাহতি পেলে একেবারে মামলামুক্ত হয়ে যাবেন ‘আপসহীন নেত্রী’ খ্যাত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং বিএনপির ‘চালিকাশক্তি’ হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তারা আশাবাদী সব পক্ষ সক্রিয় থাকলে কম সময়ের ব্যবধানে বাকি মামলাগুলো থেকে নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে একেবারে মুক্ত হবেন তারা।

বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল যুগান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৭টি ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ৮৩টি মামলা করা হয়। এসব মামলার সঙ্গে উনাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এর মধ্যে খালেদা জিয়ার ৩৫টি এবং তারেক রহমানের ৭৯টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সারা দেশে হওয়া ৩৭টি মামলার মধ্যে পাঁচটি দুর্নীতি মামলা, চারটি মানহানির ও একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা। বাকিগুলো হত্যা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, বোমা হামলা, মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের নিয়ে কটাক্ষ, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, ‘মিথ্যা’ জন্মদিন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে করা হয়। এর মধ্যে ঢাকায় ২৮টি আর ঢাকার বাইরে ৯টি মামলা হয়। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন পর্যন্ত ৩৫টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। শুধু কুমিল্লায় করা তিনটির মামলার মধ্যে একটি হত্যা ও একটি বিস্ফোরক মামলা নিষ্পত্তির বাকি রয়েছে।

অপরদিকে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সারা দেশে করা ৮৪টি মামলার মধ্যে ৭৯টি মামলা ইতোমধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে। নিষ্পত্তি হতে বাকি রয়েছে দুদকের করা জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের মামলা, মানি লন্ডারিংয়ের মামলা ও ঢাকার বাইরে ২টি মানহানির মামলা।

এদিকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল যুগান্তরকে আরও বলেন, ‘বিগত সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এবং ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের বিরুদ্ধে প্রতিটি মামলায় অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দায়ের করা হয়। আমরা প্রথম থেকে বলে আসছিলাম আইন তার নিজস্ব গতিতে চললে, দেশে আইনের শাসন কায়েম হলে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান ন্যায়বিচার পাবেন। আমরা শুকরিয়া, উনারা ন্যায়বিচার পাচ্ছেন।’

কায়সার কামাল বলেন, উনাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত ঈর্ষা থেকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এ মামলাগুলো করা হয় এবং দুঃখজনকভাবে কয়েকটিতে সাজা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছিল। তবে এসব মামলা যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে করা হয়েছিল তা এখন প্রমাণিত হচ্ছে। নিষ্পত্তি হওয়া প্রত্যেকটি মামলা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শেষ হয়েছে। এখানে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করা হয়নি। কিছু কিছু মামলা আদালতের মাধ্যমে বাতিল হয়েছে। কিছু কিছু মামলা খারিজ হয়েছে। এছাড়া কিছু মামলায় তারা বেকসুর খালাস পেয়েছেন।

খালেদা জিয়ার অবশিষ্ট ২ মামলা : একই বছরে বিএনপির টানা অবরোধ-হরতালের মধ্যে ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি বাসে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপে আট যাত্রীর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় চৌদ্দগ্রাম থানায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে চৌদ্দগ্রাম থানার তৎকালীন এসআই নুরুজ্জামান বাদী হয়ে পৃথকভাবে দুটি মামলা করেন। এরমধ্যে একটি বিশেষ ক্ষমতা আইনে, অপরটি হত্যা মামলা। এ দুটি মামলা এখন চার্জ গঠন শুনানির জন্য কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ মাহবুবুর রহমানের আদালতে আছে।

এ মামলায় খালেদা জিয়ার আইনজীবী কায়ুমুল হক রিংকু বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, বিগত সরকারের আমলে কুমিল্লায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়। এর মধ্যে বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়। এ মামলা দুটি চার্জ গঠন শুনানির জন্য আছে। আশা করছি, এ দুটি মামলা থেকেও তিনি অব্যাহতি পাবেন।

এর আগে ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চৌদ্দগ্রামের হায়দারপুল এলাকায় একটি কাভার্ডভ্যানে অগ্নিসংযোগ ও আশপাশের বেশকিছু গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় চৌদ্দগ্রাম থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে এবং নাশকতার অভিযোগে মামলা হয়। এ মামলায় চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি কুমিল্লার এক নম্বর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আফরোজা শিউলি তাকে অব্যাহতি দেন। বিচার শুরু করার মতো প্রয়োজনীয় উপাদান না থাকায় প্রত্যেককে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

তারেক রহমানের বাকি ৪ মামলা : সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচারের অভিযোগে মামলায় ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকার একটি আদালত তারেক রহমানকে খালাস দেন। ওই মামলায় তারেকের বন্ধু ও ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে দুদক। ২০১৬ সালে বিচারিক আদালতের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি ২০ কোটি টাকা জরিমানা করেন। মামলাটি হাইকোর্টে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে।

এছাড়াও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) রাজধানীর কাফরুল থানায় একটি মামলা করা হয়। এ মামলায় তারেক রহমান, তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান এবং শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়। তবে ইকবাল মান্দ বানু মারা যাওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এদিকে ২০২৩ সালের ২ আগস্ট ঢাকার একটি আদালত উল্লিখিত মামলায় রায় ঘোষণা করেন। রায়ে তারেক রহমানকে ৯ বছর এবং তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তারেক রহমানের প্রায় ৩ কোটি টাকার সম্পদ বাজেয়াপ্তের আদেশও দেওয়া হয়। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সরকারের নির্বাহী আদেশে সেই রায় ২০২৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর স্থগিত করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ডা. জুবাইদা রহমানের সাজা স্থগিতের বিষয়ে দাখিল করা আবেদন এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের মতামতের আলোকে ফৌজদারি কার্যবিধির কোড, (আইন নং-ভি ১৮৯৮ সাল) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে আদালতে আত্মসমর্পণ করে আপিল দায়েরের শর্তে এক বছরের জন্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সাজা স্থগিত করা হয়েছে।

এছাড়া তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ঢাকার বাইরে দুটি মানহানির মামলা পেন্ডিং আছে। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারেনি।

ব্যারিস্টার কায়সার কামাল যুগান্তরকে বলেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলো নিষ্পত্তি হওয়া প্রায় শেষ। এখন সাজা দেওয়া দুটি মামলা ও মানহানির আরও দুটি মামলা নিষ্পত্তি বাকি আছে। একটা নিম্ন আদালতে আরেকটা হাইকোর্টের আপিল বিভাগে পেন্ডিং। প্রত্যেকটা মামলায় আইনি প্রক্রিয়ায় আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। যেগুলো বাকি আছে, সেগুলোও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই অব্যাহতি বা খালাস পেয়ে শেষ হবে বলে আশা করছি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম