‘মার্চ ফর জাস্টিসে’ রাকিব
ছাত্রদলের সংগ্রাম বাদ দিলে ইতিহাস যাবে ডাস্টবিনে

ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:১৪ পিএম
-678bd3489f10e.jpg)
১৫ বছরের ছাত্রদলের ত্যাগ, শ্রম ও সংগ্রামকে অস্বীকার করে কোনো ইতিহাস রচনা করা হলে, তা ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করা হবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। একই সঙ্গে তিনি দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।
নিষিদ্ধ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের যথাযথ বিচার নিশ্চিত করা, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের দোসর হিসাবে ভূমিকা পালনকারীদের তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত ব্যবস্থার দাবিতে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ নামে কর্মসূচি পালনে দুপুরে শিখা চিরন্তন চত্বরে জড়ো হয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। পরে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে তারা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আসেন।
এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। পদযাত্রা থেকে নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দিয়েছেন। নেতাকর্মীদের হাতে ‘জাস্টিস ডিলেইড ইজ জাস্টিস ডিনাইড’; ‘সে নো টু মবোক্রেসি’; ‘স্টপ মব জাস্টিস’; ‘ক্রিমিনাল হ্যাভ নো প্লেস ইন ক্যাম্পাস’; ‘আওয়ামী সিনেট-সিন্ডিকেট, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’ ইত্যাদি স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড ছিল।
রাকিব বলেন, জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আমরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এক এবং ঐক্যবদ্ধ আছি। যারা জুলাই-আগস্টের আন্দোলনকে কুক্ষিগত করতে চায়, তারা যেন দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে। আমি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করতে চাই, আপনারা এমন কোনো কর্মকাণ্ড করবেন না, যাতে ঐক্য নষ্ট হয়।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সদিচ্ছা পোষণ করছে না অভিযোগ করে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগের একজন নেতাকর্মীকেও বিচারের আওতায় আনার জন্য সামান্যতম সদিচ্ছা পোষণ করছে না। সরকার ভেবেছে, ছাত্রলীগকে শুধু দায়সারা নিষিদ্ধ করলে তাদের অপকর্ম ঢাকা পড়ে যাবে।
তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের শনাক্ত করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে তদন্ত কমিটি হয়েছে। কিন্তু সাড়ে পাঁচ মাস পরেও আমরা কোনো প্রতিবেদন পাইনি। দ্রুত ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে হবে। তাদের ছাত্রত্ব বাতিল ও আইনের আওতায় আনতে হবে। আমরা কোনো আলটিমেটাম দিচ্ছি না। তবে আমরা বিচার প্রক্রিয়া শুরুর দাবি জানাচ্ছি। আপনারা যত দেরি করবেন, তাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া তত সহজ হবে।
সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানিয়ে রাকিব বলেন, বাংলাদেশে যেহেতু খুনি হাসিনার মতো ভয়ংকর ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে, তাই এখানে আর কোনো আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতির বাস্তবতা নেই। তারপর যদি কোনো রাজনৈতিক দল আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতিতে লিপ্ত থাকে, আমরা ধরে নেব, তারা আবারও ’৭১ সালের মতো কোনো ষড়যন্ত্র করছে।
ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছর ধরে যারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, সে খুনি সংগঠন সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু আমরা দেখলাম এখনো কোনো ছাত্রলীগের শীর্ষ সন্ত্রাসীকে অন্তর্বর্তী সরকার গ্রেফতার করতে পারেনি। শুধু শীর্ষ সন্ত্রাসী নয়, প্রত্যেকটি জেলায় ছাত্রলীগের যেসব শীর্ষ সন্ত্রাসী রয়েছে, তারা এখন ঢাকায় অবস্থান করছে। ছাত্রলীগের সব নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি। যেসব আওয়ামী লীগের দোসর জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে, তাদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করার দাবি জানাই।
ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে স্বৈরাচারের দোসররা এখনো বহাল তবিয়তে আছে। যারা হাসিনাকে সাহায্য করেছে, তারা থেকে গেলে জুলাই-আগস্টের স্পিরিট বিনষ্ট হবে। ফ্যাসিবাদের দোসরদের আইনের আওতায় আনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
মার্চ ফর জাস্টিসে ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি আবু আফসান মোহাম্মদ ইয়াহইয়া, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমানুল্লাহ আমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন, মহানগর উত্তরের সভাপতি মো. সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান লিপকন, দক্ষিণের সভাপতি শামীম মাহমুদ এবং সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর পূর্বের সভাপতি মো. সোহাগ ভূঁইয়া এবং সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল হান্নান মজুমদার, ঢাকা মহানগর পশ্চিমের সভাপতি মো. রবিন খান এবং সাধারণ সম্পাদক আকরাম আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।