Logo
Logo
×

বিএনপি

সরকারকে ‘গুম’ ব্যক্তিদের বিষয়ে জবাব দিতে হবে: মঈন খান

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৩, ১২:২৬ এএম

সরকারকে ‘গুম’ ব্যক্তিদের বিষয়ে জবাব দিতে হবে: মঈন খান

ছবি: সংগৃহীত

‘গুম’ হওয়া পরিবারের আর্তি সরকার শুনতে না পেলে এর পরিণতি শুভ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। তিনি বলেন, কোমলমতি শিশুরা কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছে তাদের বাবার স্মৃতি নিয়ে। একজন বলেছে গুম দিবস চাই না, আমি বাবা দিবস ফিরে পেতে চাই। কল্পনা করেছেন, একটি শিশু কি মর্মযাতনায় এই কথাটি বলতে পারে। সরকারকে এর জবাব দিতে হবে।

বুধবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস’ উপলক্ষ্যে এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। বিকাল ৩টা থেকে এক ঘণ্টার এ মানববন্ধনে কার্যালয়ের সামনের সড়কের একপাশে নেতাকর্মীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ মানবপ্রাচীর তৈরি করে। ‘গুম’ হওয়া নেতাকর্মীদের সন্ধানের দাবিতে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মানববন্ধন করে কয়েক হাজার নেতাকর্মী। ছিলেন গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরাও।

আদিবা ইসলামের বয়স যখন দুই বছর, তখন থেকেই সে আর তার বাবাকে খুঁজে পাচ্ছে না। বাবার একটি ছবি দেখিয়ে আদিবা বলে, ‘এটা আমার বাবা। বাবাকে ছাড়া আমার ভালো লাগে না। বাবাকে ফিরিয়ে দেন। গুম দিবস না, বাবা দিবস পালন করতে চাই।’

আদিবা ইসলামের বয়স এখন ১২ বছর। আদিবার বাবা পারভেজ হোসেন বংশাল থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে রাজধানীর শাহবাগ থেকে কে বা কারা তুলে নিয়ে যায় পারভেজকে। ১০ বছরেও তার কোনো খোঁজ নেই। 

ছাত্রদল নেতা ফিরোজ খানকে ২০১২ সালের ২৪ আগস্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়। 

তার স্ত্রী আমেনা আকতার বলেন, ১১ বছর ধরে স্বামীর সন্ধানে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি। কাপড় সেলাই করে সংসার চালাই। আমার স্বামীকে কী করেছেন, তার জবাব সরকারকে দিতে হবে।
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে মাজহারুল ইসলামকে তুলে নেওয়া হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে। 

মাজহারুলের ভাই লোটাস বলেন, ১০ বছর ধরে আমার পরিবার কান্না করছে। দিনের পর দিন প্রশাসনের কাছে গিয়েছি, কেউ কোনো সহায়তা করেনি।

কুমিল্লার লাকসাম পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবিরকে ২০১৩ সালের নভেম্বরে তুলে নেওয়া হয়। তার  ছেলে শাহরিয়ার বলেন, আমার বাবাকে সাদা পোশাকে তুলে নেওয়া হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পোশাক পরা অবস্থায় তুলে নিয়ে গেছে। তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।

গুম হওয়া মাহফুজুর রহমান সোহেলের মেয়ে সাফা কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, বাবাকে আজকে ১০ বছর ধরে দেখি না। বাবাকে নিয়ে ঈদের সময় নতুন জামা কিনতে পারি না, বাবাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে পারি না। এছাড়া গুম হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজীদা ইসলাম তুলিও তাদের দুঃখ ও কষ্টের কথা বলতে গিয়ে বারবার অশ্র“সজল হয়ে পড়েন। 

সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান বলেন, এই সরকার আমাদের ২ হাজার ৭০০ ভাইকে গুম করেছে। এই সরকার গুমের সরকার। রাজপথেই এই সরকারকে সরানোর ফয়সালা করতে হবে। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল ইসলামের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী, কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুজ্জামান, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, ছাত্রদলের রাশেদ ইকবাল খান প্রমুখ। 

খুলনা: গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষ্যে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির উদ্যোগে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়। নগরীর কে.ডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা। মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন এবং জেলা সদস্য সচিব মনিরুল হাসান বাপ্পির পরিচালনায় আরও বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান, তারিকুল ইসলাম জহীর, আবু হোসেন বাবু, স ম আ রহমান, খান জুলফিকার আলী জুলু, এসএ রহমান বাবুল, কাজী মাহমুদ আলী, মো. রকিব মল্লিক, শের আলম সান্ট প্রমুখ। 

ফরিদপুর: ফরিদপুর জেলা ও মহানগর বিএনপির উদ্যোগে এক মৌন মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোদাররেস আলী ইছার নেতৃত্বে শহরের কাঠপট্টিস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মৌন মিছিল বের হয়। বক্তব্য রাখেন ফরিদপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব একেএম কিবরিয়া স্বপন, যুগ্ম আহ্বায়ক এমটি আখতার টুটুল, যুগ্ম আহ্বায়ক আবজাল হোসেন খান পলাশ, যুগ্ম আহ্বায়ক জুলফিকার হোসেন জুয়েল, যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট আশরাফুল আলম নান্নু, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম মোস্তফা মিরাজ, মহানগর কৃষক দলের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মামুনুর রশীদ মামুন, জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক রেজাউল করিম, জেলা যুবদলের সভাপতি রাজীব হোসেন, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন, মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক বেনজির আহমেদ তাবরীজ, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক তানজিমুল হাসান কায়েস প্রমুখ।

কিশোরগঞ্জ: মুখে কালো কাপড় পরে বুধবার শহরে প্রতিবাদী মৌন মিছিল করেছেন কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। মিছিলে নেতৃত্ব দেন ও অংশ নেন কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি রুহুল হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলাম আশফাক, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. বাহার মিয়া, জেলা যুবদলের সভাপতি খসরুজ্জামান শরীফ, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. মারুফ মিয়া প্রমুখ।

সিলেট: সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতারা বলেছেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী, ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনার, জুনায়েদ আহমদ ও আনছার আলীসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুম করেছে আওয়ামী লীগ। তাদের পরিবার-পরিজন, স্ত্রী-সন্তানসহ আত্মীয়স্বজনরা আজও তাদের পথ চেয়ে বসে আছে। বুধবার সন্ধ্যায় নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষ্যে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির মৌন মিছিল-পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইনের সভাপতিত্বে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর যৌথ সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আশিক উদ্দিন আহমদ, সহসভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন, মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী প্রমুখ।

যশোর: যশোরে বিএনপির কালো পতাকা মিছিল কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন দলটির নেতাকর্মীরা। বুধবার বিকালে শহরের লালদীঘির দলীয় কার্যালয় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে মুখে কালো পতাকা বেঁধে লালদীঘি চত্বরেই মৌন মিছিল করে এই কর্মসূচি শেষ হয়। মিছিলে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম, সদস্য সচিব সাবেরুল হক সাবু, যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন, গোলাম রেজা দুলু, মারুফুল ইসলামসহ জেলা বিএনপির নেতাকর্মী ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম