Logo
Logo
×

বিএনপি

সংঘাত নয় শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার পরিবর্তন চাই: ফখরুল

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৩, ০৯:৫৯ পিএম

সংঘাত নয় শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতার পরিবর্তন চাই: ফখরুল

বর্তমান সরকার দেশ-বিদেশে সমর্থন হারিয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে উদ্দেশে করে তিনি বলেন, ‘সরকারের সময় শেষ হয়ে গেছে। এখন সরকারের কোনো অন্যায় আদেশ মানা হলে তা জনগণের বিরুদ্ধে যাওয়া হবে।’

‘এই সরকার দেশে-বিদেশে সমর্থন হারিয়েছে। এখন দেশের মানুষ ও গণতান্ত্রিক বিশ্ব একটা সুষ্ঠু, অবাধ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। তারা জানে সেটা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া সম্ভব হবে না। তাই দয়া করে এমন অবস্থা তৈরি করবেন না, যেখানে আপনারাও চিহ্নিত হয়ে যাবেন।’

শুক্রবার বিকালে রাজধানীর শ্যামলী ক্লাব মাঠে এক জনসমাবেশে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সংঘাত চাই না। শান্তিপূর্ণ উপায়ে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতার পরিবর্তন চাই। আমরা মনে করে নির্বাচনই এর একমাত্র উপায়। কিন্তু সেই নির্বাচন কখনোই আওয়ামী লীগের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। ২০১৮ ও ২০১৪ সালে দেখেছি। তাদের আর বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। শেখ হাসিনার (প্রধানমন্ত্রী) অধীনে এবার নির্বাচনে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই থাকতে পারে না।

প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যতই চিল্লাচিলি­ করেন, যতই জাপান, যুক্তরাজ্য, আমেরিকা আর সৌদি আরব, কাতার, চীনে যান- কোনো লাভ হবে না। সময় শেষ। এটাই বাস্তবতা। তাই এখনো সময় আছে জনগণের চোখের ভাষা পড়ুন, জনগণকে মুক্তি দিন। জনগণের দাবি মেনে নিন। গণভবন থেকে বের হন। পাইক-পেয়াদা, বরকন্দাজ, এসএসএফ, সোয়াত- এগুলো বাদ দিয়ে মানুষের সামনে এসে দাঁড়ান। দেখুন তারা কী বলে। মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। মানুষ আর বাঁচতে পারছে না।’

নেতাকর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনেক কষ্ট করেছেন, আর কিছুদিন কষ্ট করতে হবে। এই সরকারকে টেনে না নামালে এরা যাবে না। সেজন্য সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, ব্যক্তি-সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। ঝড়ের মতো দুর্বার গণআন্দোলন সৃষ্টি করে সরকারকে পরাজিত করতে হবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের খুব পরিষ্কার কথা,  প্রথম শর্তে বলেছি, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। তারেক রহমানসহ ৪০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা আছে, তা প্রত্যাহার করতে হবে। তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। পদত্যাগ করে সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। সংসদ রাখবেন আর আমরা নির্বাচন করব- এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। এমপিরা এমপি থাকবেন। আর সংসদ নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচন কোনোদিন সুষ্ঠু হবে না। সেই কারণে সংসদ আগেই বিলুপ্ত করতে হবে।’

‘উচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে অধীনস্থ আদালত ও সরকারের অবজ্ঞা, গায়েবি মামলায় নির্বিচারে গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা ও পুলিশি হয়রানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের লোডশেডিং, আওয়ামী সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতির প্রতিবাদ এবং ১০ দফা’ দাবি বাস্তবায়নে এ সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি। ৮২টি সাংগঠনিক জেলায় চার ধাপে জনসমাবেশের ঘোষণা দেয় দলটি। প্রথম ধাপে এদিন ঢাকা উত্তরসহ ২৭ জেলায় পালন করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে শনিবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণসহ ১৮ সাংগঠনিক জেলায় জনসমাবেশ হবে। 

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সমাবেশ হবে মতিঝিল পীরজঙ্গী মাজারের সামনে। এতে স্থায়ী কমিটি সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মির্জা আব্বাসসহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া লালমনিরহাটে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মুন্সীগঞ্জে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঝিনাইদহে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ প্রতিটি জেলার সমাবেশে সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থাকবেন।

শ্যামলী ক্লাব মাঠে সমাবেশে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। এ সময় তাদের হাতে ‘নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই’; ‘জনগণ ব্যালট চায়, পুলিশের বুলেট নয়’; ‘ব্যালট চাই, ভোট দেবো’ ইত্যাদি প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।

ইসির নতুন আইন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশন কেমন নির্বাচন করবেন তার প্রমাণ তো দেখলাম। একটা নতুন আইন করতে যাচ্ছেন। যে নির্বাচন কমিশন আসলে কোনো নির্বাচন বাতিল করতে পারবেন না। তাহলে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতাটা কোথায়? কাকে এসব বুঝাচ্ছেন? বাংলাদেশের সব মানুষকে কি বোকা মনে করেন। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে আর কতদিন প্রতারণা করবেন। আর পারবেন না।’

বিদ্যুৎ-শিক্ষা-স্বাস্থ্যসহ সর্বক্ষেত্রে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার সব কিছু শেষ করে দিয়েছে। তারা শেষ সময়ে টিকে থাকার জন্য মরণ কামড় দিচ্ছে। মিথ্যা মামলা, গায়েবি মামলা দিচ্ছে। হাইকোর্ট থেকে জামিন দেয়, সেই জামিন নিয়ে নিম্ন আদালতে গেলে তা বাতিল করে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। কোনো ঘটনাই ঘটেনি, মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে নিয়ে যাচ্ছে।’

মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, মীর নেওয়াজ আলী সপু, রকিবুল ইসলাম বকুল, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, পারভেজ রেজা কানন, রফিক শিকদার, মহানগর উত্তর বিএনপির আমিনুল হক, তাবিথ আউয়াল, মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, যুবদলের মামুন হাসান, শফিকুল ইসলাম মিল্টন, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম