Logo
Logo
×

বিচ্ছু

রম্যগল্প

যখন ভুল বুঝে ভুল হয়ে যায়

Icon

মাসুদ রানা আশিক

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৪, ০৭:৪০ পিএম

যখন ভুল বুঝে ভুল হয়ে যায়

প্রতীকী ছবি

সাতসকালে বউয়ের চিত্কার, ওগো শুনছ। পাশের বাসার ভাবিটা না কাঁদছে। কী হয়েছে একটু খোঁজ নিয়ে এসো না। 

পত্রিকা পড়ছিলাম। মুখ তুলে তাকালাম বউয়ের দিকে। বউয়ের এমন দৌড়ে আসা দেখে কিছুটা ভড়কে গেলাম। বললাম, একটু ঠান্ডা হও। এভাবে দৌঁড়ানোর ফলে যদি একবার পড়ে যাও তাহলে দফারফা হয়ে যাবে। চিকিত্সা করাতে গেলে আরেক পেরেশানি।

বউয়ের মুখ থেকে সব শুনলাম। পাশের বাসার রেক্কাত ভাইয়ের বাসায় কিছু একটা হয়েছে। রেক্কাত ভাইয়ের স্ত্রী নাকি কাঁদছেন। এখন সেখানে কী হয়েছে সেটা আমাকে জানতে হবে। আজকাল বাংলাদেশে অনেক কিছুই হচ্ছে। কোথাকার জল কোথায় গিয়ে থামছে সেটাও বোঝা যাচ্ছে না। নিশ্চই কিছু একটা হয়েছে। না হলে এত জোরে চিত্কার করে কাঁদার তো কোনো কারণ নেই। 

বউয়ের কথায় কান না দিয়ে আমি নিজে ব্যালকনিতে গেলাম ঘটনার সত্যতা জানতে। রেক্কাত সাহেবের স্ত্রী চিত্কার করে কাঁদছেন আর বলছেন, বলো কে মারা গেছে? 

আমি নিজের ঘরে চলে আসি। ফোনটা হাতে নিই। ফোন করা দরকার রেক্কাত সাহেবকে। প্রতিবেশী হিসাবে ঘটনা জানার এবং তাদের উপকার করার পূর্ণ অধিকার আছে আমার। ফোন দিলাম। তিনবারের বেলায় ফোন ধরলেন তিনি। ঘুমজড়িত কণ্ঠে বললেন, কী হয়েছে!' 

আমি তো অবাক। বলে কী লোকটা! কী হয়েছে মানে! স্ত্রী কাঁদছেন আর তিনি ঘুমজড়িত কণ্ঠে এসব কী বলছেন! 

বললাম, আমি আজিজ। পাশের ফ্ল্যাটের। আপনার স্ত্রী কাঁদছেন। কে যেন মারা গেছেন। আপনি তাকে থামাচ্ছেন না কেন?'

কিছুক্ষণ নীরবতা। কোনো কিছু বুঝতে পারি না আমি। ফোনটা কেটে গেল। আমি তাকাই বউয়ের দিকে, নিরাশ নয়নে। এতগুলো কথা বললাম, কোনো উত্তর নেই! পাশের রুমের দরজা খুলে যায়। যেটাতে আমার ছেলে রিফাত থাকে। সে বের হয়ে বলল, বাবা, তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে? এত সকালে ফোন দিয়ে বলছ, আমার স্ত্রী কাঁদছে! কে যেন মারা গেছে আমার স্ত্রী'র! আমাকে তুমি কবে বিয়ে দিলে বলো তো!'

আমি অবাক। ফোন দিলাম রেক্কাত ভাইকে। আবার ফোনটা হাতে নিই। ডায়াল কল দেখি। রেক্কাত নয়, আমি রিফাতকে ফোন দিয়েছি। রেক্কাত আর রিফাত পাশাপাশি নাম তো। এবার সরেজমিনে যাওয়াটাই উত্তম মনে করলাম। আমি আর আমার বউ চলে এলাম পাশের বাসায়। কলিং বেল টিপি। টিং টং। মুহূর্তেই খুলে যায় দরজা। রেক্কাত সাহেব নিজে খুললেন। আমাদের দেখে বললেন, এসেছেন ভালো করেছেন ভাই। আমার বউকে থামানোই যাচ্ছে না। সেই সকাল থেকে কঁাদছে। এমনিতেই দেশের বন্যা পরিস্থিতি খারাপ। এত কান্নার ফলে ঘরে আবার বন্যা না আসে!'
আমি বললাম, কী হয়েছিল?'

তেমন কিছুই না। আমি শুধু বলেছিলাম ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাহি রাজিউন। তাতেই এই অবস্থা।'

তা কে মারা গেল ভাই? নিশ্চয়ই ভাবির কোনো আপনজন। না হলে তার তো এভাবে মরা কান্না দেওয়ার কথা না।' 

এবার কান্নার মাঝেই চিত্কার করে ওঠেন রেক্কাত সাহেবের স্ত্রী, ওকে বলতে বলেন কে মারা গেছে! সকাল থেকেই বলছি। কিন্তু কোনো উত্তর দিচ্ছে না।'

ভাবনায় পড়ে যাই। রেক্কাত সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললাম, ভাই, সত্যি করে বলেন তো কে মারা গেছেন? আর কেনই বা আপনি সেটা বলতে চাচ্ছেন না!'

রেক্কাত সাহেব এবার পত্রিকা হাতে তুলে নিলেন। পাতা উলটাতে উলটাতে বললেন, পত্রিকার খবরগুলোর দিকে নজর দিন।' আমি নজর দিলাম। বেশ কয়েকটা খবর এসেছে। মূল খবর এসেছে এভাবে সাভারে দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত।

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ১৩ জনের লাশ উদ্ধার। আরও এসেছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। এ পর্যন্ত মারা গেছে ২৬ জন। এক জায়গায় লেখা আছে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে মহিলা নিহত। আর এক জায়গায় লেখা প্রকাশ্যে কুপিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে একজনকে। মোটর সাইকেলে সর্ব্বোচ্চ মৃতু্যহার দেশে। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিনই প্রাণ যাচ্ছে অনেকের।

আমি রেক্কাত সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললাম, খবরগুলোর দিকে নজর দিলাম। বুঝলাম না।' এবার রেক্কাত সাহেব বললেন, 

প্রায় সবই তো মৃতু্যর খবর। এজন্যই মৃতু্যর দোয়া পড়েছিলাম। আর বউ ভেবেছে তার কাছের আত্মীয় কেউ মারা গেছে!'
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম