কাল আমার বর আমাকে ফুলকপি দিয়ে প্রপোজ করেছে। আমি আবার রিপিট করছি, সে আমাকে ফুলকপি দিয়ে প্রপোজ করেছে। রাগি স্বরে বললাম, ‘এসব কী! বিয়ের আগে আজকের দিনে তুমি আমাকে রজনীগন্ধা দিয়ে প্রপোজ করছিলা।’
সে একটা হাসি দিয়ে বলল, ‘ফুল আর ফুলকপির মধ্যে একটা পার্থক্য দেখাও তো? কী এমন তফাৎ হয় এই দুইটার মধ্যে! দুটোর নামেই ফুল আছে। আর ফুল দিলে তো শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যে তো কিন্তু ফুলকপিটা রেঁধেও খেতে পারবা। আর আমাদের এখন থেকেই একটু সাশ্রয়ী হতে হবে। এই জন্যই ফুলকপি নিয়ে এলাম। প্রপোজও হবে সাথে আজকের মেনুতে ফুলকপির আইটেম থাকবে। একের ভেতর দুই। হা হা হা... আইডিয়াটা কেমন বলো?’
এরকম কথার কী উত্তর দেবো সেটা ভাবতে ভাবতে আমার মাথায় একটা চক্কর দিলো। নিজেকে কন্ট্রোল করে বললাম, ‘যখন প্রেমিক ছিলা তখন তো এমন কিপ্টা ছিলা না তুমি।’
সে ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘ফুল আর ফুলকপির মধ্যে যেমন পার্থক্য খুঁজো তেমন এটাও তো বোঝা উচিত প্রেমিক আর স্বামীর মধ্যেও কিঞ্চিত পার্থক্য আছে। আগে প্রেমিক ছিলাম তাই ফুল দিয়ে প্রপোজ করেছি। এখন স্বামী হয়েছি তাই ফুলকপি দিয়ে প্রপোজ করেছি সিম্পল!’
আমাদের দ্বিতীয় বিবাহ বার্ষিকীতে সে আমাকে একটা নতুন মিক্সার আর টোস্টার গিফট করেছে। ফেসবুকে কয়েকবার শাড়ির পেজে মেনশন দিয়েছিলাম যেন এবার অন্তত শাড়ি কিনে দেয়। কিন্তু তা আর হইলো কই! সেই আবার গিফট হিসাবে যন্ত্রপাতি নিয়ে আসছে।
প্রচন্ড রাগি গলায় বললাম, ‘এসব কী নিয়ে আসছো? মিক্সার নষ্ট হইছে সেই এক বছর আগে আর এখন তুমি এনিভার্সেরিতে এগুলো গিফট করতেছো মানেটা কী?’
সে শান্ত গলায় বলল, ‘দেখো, এক বছর আগে মিক্সার কিনে দিতে বলছ। দেখতে দেখতে আমাদের বিবাহ বার্ষিকী চলে এসেছে তাই ভাবলাম এখন যদি তোমার জন্য শাড়ি, জুয়েলারি বা মেকআপ কিটস কিনি তাহলে আবার মিক্সার কেনার জন্য কতগুলো টাকা নষ্ট হবে। একসাথে এতো অপচয় করা ঠিক না। আর দেখো আমি কত ভালো স্বামী! তোমার নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো গিফট করলাম। গিফটও দেয়া হইলো সাথে কাজের কাজও হইল। সাশ্রয়ী হওয়া ভালো বুঝছো। আমাকে তোমার থ্যাংক্সস দেয়া উচিত উল্টো চিল্লাচিল্লি করতেছো। তোমরা বউরা এমন কেন?’
রাগে কটমট করতে করতেও আমি চুপচাপ রুমে চলে গেলাম। রাতে খাবার খাওয়ার সময় সে আমাকে ডাকতে ডাকতে বলল, ‘আজকে ভালো কিছু রান্না হয়েছে নিশ্চয়ই। তাড়াতাড়ি দাও। কী কী আইটেম হয়েছে গো?’
আমি একটা হাসি দিয়ে বললাম, ‘ভীষণ সাশ্রয়ী হতে হবে বুঝলা। ভেবেছি এখন থেকে মাঝে মাঝে বাসায় রান্না করব না। এতো খাওয়া-দাওয়া করলে সাশ্রয়ী হবো কেমনে বলো! তাই আজ কিছু রান্না করিনি। আজকের বাজার গুলো বেঁচে গেলো। তোমার তো আমাকে ধন্যবাদ দেয়া উচিত। অনেক ভাগ্য করে এমন সাশ্রয়ী বউ পাওয়া যায়। কী বলো?’ সে হা করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।