আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে পিকলু হচ্ছে সর্বোচ্চ পর্যায়ের হাড় কিপটে। যেখানে এ যুগের আন্ডা বাচ্চারাও অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করে, সেখানে পিকলু তার অ্যান্ড্রয়েড ফোন বাসার সিন্ধুকে তালা দিয়ে রাখে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে। আর কী একটা বাটন ফোন ব্যবহার করে যেটা কাউকে হাত পর্যন্ত লাগাতে দেয় না।
সেদিন আমাদের বন্ধু বিপুল পিকলুর বিখ্যাত বাটন ফোনটা একটু হাতে নিতেই সঙ্গে সঙ্গে পিকলু সেটা তার হাত থেকে রীতিমতো ছোঁ মেরে কেড়ে নিয়ে ব্যাগ থেকে একটা রুমাল বের করে ফোনটা মুছতে মুছতে বলল, ‘দিলি তো আমার মোবাইলটায় স্কেচ বসিয়ে।’
পিকলু যদি কখনো ভিক্ষুককে দুই টাকা ভিক্ষা দেয় তবে একটু বাদেই আবার ভিক্ষুকের বাটি থেকে এক টাকা তুলে নেয়। তারপর ভিক্ষুককে একটানা উপদেশ বাণী প্রদান করতে শুরু করে। এক পর্যায়ে ভিক্ষুক বিরক্ত হয়ে উলটো পিকলুকেই পাঁচ টাকা দিয়ে বিদায় করে দেয়।
নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে কখনো সে বন্ধুদের খাইয়েছে এমন রেকর্ড নেই। কিন্তু বন্ধুদের পকেট কেটে খাওয়ার তার অসংখ্য রেকর্ড আছে। কিন্তু আমাদের পাড়ার সুন্দরী মেয়ে জুলির জন্য পিকলু কিপটামি থেকে একটু দূরেই থাকত।
জুলিকে নিয়ে খরচের ব্যাপারে সে ছিল উদার। আমাদের বন্ধুদের কখনো এক কাপ চা না খাওয়ানো পিকলু প্রায়ই জুলিকে নিয়ে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে হানা দিত। বরাবরই পিকলু জুলির কাছে হিরো সাজার চেষ্টা করত। তবে বেশ কিছুদিন ধরেই পিকলু উঠে পড়ে লেগেছে জার্মান ভাষা শেখার জন্য। এর কারণ খুঁজতে গিয়ে সবাই আবিষ্কার করলাম, পিকলু নাকি শুনেছে জুলি এইচএসসির পর পড়াশোনার জন্য জার্মান চলে যাবে। তাই পিকলুও জার্মান ভাষা শিখছে জার্মান যাওয়ার জন্য।
আগে থেকে এখন পিকলুকে জুলির আশপাশে বেশিই দেখা যায়। এদিকে পিকলু তার বাবা-মাকে বহু ধানাইপানাই করে রাজি করিয়ে তাদের গ্রামের জায়গা-জমি বিক্রি করে জার্মান পাসপোর্টও করে ফেলছে। দেখতে দেখতে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের দিন ঘনিয়ে এলো। দিন কয়েক পরই শুনলাম পিকলু হাসপাতালে ভর্তি। খবর শোনা মাত্রই আমরা হাসপাতালের উদ্দেশে ছুটলাম।
সেখানে গিয়েই জানতে পারলাম জুলি পরীক্ষায় ফেল করেছে। এ ব্যাপারে জুলিকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য পিকলু জুলিদের বাসায় গিয়েই জানতে পারল, দিন কয়েক আগেই জুলি তার পাড়ারই এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে পালিয়ে গেছে। সেই শোকেই পিকলু এখন হাসপাতালে ভর্তি।
সরকারি তিতুমীর কলেজ, ঢাকা