করোনার অনেক ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে একটি হচ্ছে, অনলাইন ক্লাসের সুবাদে শিক্ষার্থীদের হাতে স্মার্টফোন তুলে দেয়া।
ফলে শিক্ষা কার্যক্রম কেমন চলছে তা বোঝা না গেলেও গেমসের তীব্র শব্দে শিক্ষার্থীদের গেমসে পটু হয়ে ওঠার ব্যাপারটা কিন্তু বোঝা যায়। অভিভাবকরা আগে কেবল রেজাল্ট নিয়ে চিন্তা করতেন, এখন এ গেমসের নেশা কীভাবে দূর করা যায় এ নিয়েও ভাবতে হচ্ছে!
প্রায় সব ঘরেই স্মার্টফোনের এ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। বাতেন সাহেবের সংসারও এর ব্যতিক্রম নয়। কেননা তাদের সন্তান মতিনও এখন গেমসে মগ্ন। বাতেন সাহেবের স্ত্রী মতিনকে বকাঝকা করেও গেমসবিমুখ করতে পারেননি। প্রায় প্রতিদিন সুযোগ পেলেই তিনি মতিনের অন্ধকার ভবিষ্যৎ নিয়ে সতর্ক করেন স্বামীকে।
বাতেন সাহেব কানের কাছে স্ত্রীর ঘ্যানঘ্যান শুনে মাঝে মধ্যে মতিনকে ধমক-টমক দেন, ব্যস এটুকুই। বাতেন সাহেব নিজেও জানেন এসব গেমস ছেলের রগে রগে মিশে গেছে! এখন হুট করে চাইলেই ওকে ফেরানো কঠিন। তাই ধীরে ধীরে এখান থেকে ফেরাতে হবে। তা না হলে স্ত্রীর ভবিষ্যদ্বাণী ফলে যাবে নিশ্চিত।
ভোর হতেই হাতে আসল খবরের কাগজ। কাগজ ওলটাতেই একটি খবরে চমকে গেলেন তিনি। ময়মনসিংহে এক কৃষকের ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার পরও প্রায় অর্ধলাখ টাকার বিল এসেছে! বাতেন সাহেব চিন্তা করছিলেন, কীভাবে এটা সম্ভব! একই নামের আরেকজন লোক নেই তো গ্রামে? নাম এক হওয়ার কারণে হয়তো বিল চলে এসেছে? যেমনটা এদেশে প্রায়ই ঘটে। নামের মিলের কারণে অনেকেই বিনা দোষে জেলও খাটেন বছরের পর বছর!
এমন সময় চা নিয়ে স্ত্রী এলেন সামনে। তাকে নিউজটা পড়ে শোনাতে শুরু করলেন বাতেন সাহেব। অর্ধেক শুনেই স্ত্রী মত দিয়ে দিলেন, ‘এটা ওই লোকেরই বিল!’ বাতেন সাহেব জানেন, তার স্ত্রী সবসময় তার কথার বিপরীত পাশে অবস্থান করেন। তাই বলে দিবালোকের মতো পরিষ্কার একটা ব্যাপারেও দ্বিমত করতে হবে? বাতেন সাহেব বললেন, ‘একটু বুঝাও তো, সংযোগ ছাড়া একজন লোক কীভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন?’
‘তুমি যেভাবে সংযোগ ছাড়াই আরেকজনের ওয়াইফাই লাইন ব্যবহার করছ সেভাবেই! তোমার তার নাই, তোমার নামে সংযোগ নাই; কিন্তু দারোয়ানকে পয়সা দিয়ে চারতলার ওয়াইফাইয়ের পাসওয়ার্ড নিয়ে যেভাবে ইন্টারনেট চালাচ্ছ, এখানেও হয়তো সেরকম কিছু ঘটেছে!’
স্ত্রীর এমন উদাহরণে বিরক্ত হলেও তা সহজে খণ্ডাতে পারলেন না। তারপরও বাতেন সাহেব চেষ্টা চালিয়ে গেলেন, ‘আরে, ইন্টারনেট আর বিদ্যুৎ কী এক জিনিস নাকি! তারের সংযোগ ছাড়া ব্যবহার করা যাবে? ওইলোক তো শুধু আবেদন করেছিলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ-টংযোগ কিছুই পাননি। অথচ তার নামে বিল হাজির! এবার বলো, এটা কীভাবে সম্ভব?’
বাতেন সাহেবের স্ত্রী নির্বিকার কণ্ঠে বললেন, ‘যে দেশে রাজনৈতিক দলের শুধু সমর্থন করেই দলের নেতাকর্মী পরিচয় দিয়ে ফায়দা লুটে নেয়, অথচ ধরা পড়লে দলের সদস্য পদের আবেদনপত্রও খুঁজে পাওয়া যায় না, সে হিসেবে আবেদনপত্রের জন্য তাকে গ্রাহক ধরাই যায়!’
স্ত্রীর এমন জবাবের বিপরীতে বাতেন সাহেবের বলার কিছু নেই। তবে তিনি স্ত্রীকে জবাবটি দিলেন মোক্ষম জায়গায়। বললেন, ‘তাহলে তোমার ছেলের ভবিষ্যৎ তো উজ্জ্বল!’
‘কীভাবে?’
‘যদি শুধু আবেদনপত্রের জন্য বিল আসাটা তোমার কাছে স্বাভাবিক মনে হয়, তাহলে তোমার ছেলেকে দিয়ে বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরির আবেদন পাঠিয়ে সেলারি অ্যাকাউন্ট খুলে রাখি! শুধু আবেদনপত্রের জোরেই সে ওসব কোম্পানির কর্মচারী বা কর্মকর্তা বনে যাবে, আর তার অ্যাকাউন্টে একসময় লাখ লাখ টাকা বেতন ঢুকবে! কী বলো, সম্ভব না?’
বাতেন সাহেবের স্ত্রী চুপ হয়ে গেলেন। কারণ তিনি জানেন, এতক্ষণ তর্কের খাতিরেই তিনি স্বামীর সঙ্গে তর্ক করছিলেন। কেননা বিদ্যুতের লোকজন শুধু আবেদনপত্রের জন্য বিল করলেও পৃথিবীর কোনো প্রতিষ্ঠান শুধু আবেদনপত্রের জন্য বেতন দেবে না। অন্যদিকে বিদ্যুৎ বিলের খবর পড়ে বাতেন সাহেবের বিদ্যুতের লোকজনের প্রতি যে বিদ্বেষ জন্মেছিল, স্ত্রীকে চুপ করাতে পেরে সেই তাদের প্রতিই কেমন যেন একটা টান অনুভব করলেন!