কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নগদ জমা রাখার হার কমল
ব্যাংকগুলোতে তারল্য বাড়ল ৯ হাজার কোটি টাকা

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৫, ১১:০৪ পিএম

বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট কমাতে ও নগদ টাকার জোগান বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ব্যাংকগুলোর নগদ অর্থ জমা রাখার হার বা ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও (সিআরআর) শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আগে মোট আমানতের মধ্যে প্রতিদিনের ভিত্তিতে সাড়ে তিন শতাংশ অর্থ জমা রাখতে হতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। এখন থেকে রাখতে হবে ৩ শতাংশ। এক্ষেত্রে জমার হার কমেছে দশমিক ৫ শতাংশ। এ কারণে বাজারে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত নগদ অর্থের জোগান বাড়বে। যা দিয়ে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের বাড়তি চাহিদা মেটাতে পারবে। তবে প্রতি দুই সপ্তাহের ভিত্তিতে মোট আমানতের ৪ শতাংশ অর্থ জমা রাখতে হবে।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ নির্দেশনা বুধবার থেকে কার্যকর হবে। সাধারণ ও ইসলামী ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে এই বিধান কার্যকর হবে। আগে ইসলামী ব্যাংকগুলোর জন্য আলাদা বিধান ছিল।
সূত্র জানায়, ব্যাংক খাতে বর্তমানে তারল্য সংকট রয়েছে। এ কারণে বেশকিছু ব্যাংক গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী টাকার জোগান দিতে পারছে না। রোজা ও আসন্ন ঈদ উপলক্ষ্যে গ্রাহকদের নগদ টাকার চাহিদা আরও বাড়বে। যে কারণে ব্যাংকে তারল্যের জোগান বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতিমালা শিথিল করেছে।
ব্যাংকগুলোতে মোট যে আমানত থাকে তার একটি অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নগদ আকারে জমা রাখতে হয়। জরুরিভিত্তিতে ব্যাংকের নগদ অর্থের প্রয়োজন হলে এখান থেকে টাকা তুলে নিতে পারে। বর্তমানে ব্যাংক খাতে মোট আমানতের পরিমাণ প্রায় ১৮ লাখ কোটি টাকা। এর সাড়ে তিন শতাংশ হিসাবে আগে জমা রাখতে হতো ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এখন জমার হার কমিয়ে ৩ শতাংশ করায় জমা রাখতে হবে ৫৪ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে বাজারে অতিরিক্ত ৯ হাজার কোটি টাকা চলে আসবে বুধবার থেকে। এ অর্থ দিয়ে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের সঙ্গে লেনদেন করতে পারবে। ফলে ব্যাংকগুলো যেমন বাড়তি ঋণ দিতে পারবে, তেমনি আমানতকারীদের অর্থও ফেরত দিতে পারবে। তবে ব্যাংকগুলোকে দুই সপ্তাহের ভিত্তিতে মোট আমানতের ৪ শতাংশ অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নগদ জমা রাখতে হবে।
এদিকে ব্যাংকগুলোর বিধিবদ্ধ আমানত জমা রাখার হারে বা এসএলআরের ক্ষেত্রে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। আগের মতো সাধারণ ব্যাংকগুলোতে মোট আমানতের ১৩ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকগুলোকে মোট আমানতের সাড়ে ৫ শতাংশ জমা রাখতে হবে। ব্যাংকগুলো এ খাতের অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নগদ বা বিভিন্ন সরকারি খাতের বন্ডে বিনিয়োগ করে রাখতে পারে। বন্ডে বিনিয়োগ করে জমা রাখলে এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো মুনাফা পায়। নগদ রাখলে কোনো মুনাফা পায় না। তবে সিআরআরের অর্থ ব্যাংকগুলোকে নগদ জমা রাখতে হয়।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) একটি শর্ত হচ্ছে ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় তারল্যের জোগান নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর নির্ভরতা কমানো ও ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে। এর শর্ত বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর আলোকে তারল্য ব্যবস্থাপনায় ব্যাংকগুলোর সার্বিক দক্ষতা বাড়াতে ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর নির্ভরতা কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ধার দেওয়ার প্রবণতা কমানো হয়েছে। এজন্য এখন প্রতিদিন ব্যাংকগুলো ধার পাচ্ছে না। ১৪ দিন ও ২৮ দিন মেয়াদে ধার নিতে হচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলো তারল্য ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে পারছে। এ ব্যবস্থাপনায় কোনো ব্যাংককে যাতে অর্থ সংকটে না পড়তে হয় সেজন্য নগদ জমা সংরক্ষণে ছাড় দিয়ে তারল্যের জোগান বাড়ানো হয়েছে।