প্রতীকী ছবি
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর আন্তঃব্যাংক বা এক ব্যাংকের সঙ্গে অন্য ব্যাংকের লেনদেনে বড় ধরনের ভাটা পড়েছে। গত ৬ মাসের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা। ১ মাসের ব্যবধানে কমেছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেড়েছে। ব্যাংকের সংখ্যার পাশাপাশি শাখাও বেড়েছে। এ অবস্থায় আন্তঃব্যাংক লেনদেন যেখানে বাড়ার কথা, সেখানে কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
আন্তঃব্যাংক লেনদেন কমার জন্য ব্যাংকাররা তারল্য সংকট ও দুর্বল ব্যাংকগুলোর প্রতি সবল ব্যাংকগুলোর আস্থাহীনতাকেই মূলত দায়ী করেছেন। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে ভিন্ন কথা। ব্যাংকগুলোকে সব সূচকেই দুর্বলতা কাটানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তা না হলে ২০২৫ সালের শুরু থেকে তারা আরও চাপের মুখে পড়বে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নানা ধরনের নীতি সহায়তা আটকে দেওয়া হবে। যে কারণে ব্যাংকগুলো এখন তারল্য ব্যবস্থাপনার মানোন্নয়নে কাজ করছে। এছাড়া সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির কারণে বাজারে তারল্যের জোগান কমাতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে আন্তঃব্যাংক লেনদেন কমেছে।
ব্যাংকগুলোর তারল্য ব্যবস্থাপনা ও দৈনন্দিন চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে আন্তঃব্যাংক লেনদেন গুরুত্বপূর্ণ এক উপকরণ। এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে ধার নেওয়াটা একটি স্বীকৃত পদ্ধতি। বিশ্বব্যাপীই এ পদ্ধতি চালু আছে। বাংলাদেশে ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলো জরুরি প্রয়োজনে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংক ধার করে। এই ধারের প্রবণতা কমার প্রধান কারণ হিসাবে ব্যাংকাররা মনে করছেন, তারল্য সংকট ও আস্থাহীনতাকে। অনেক দুর্বল ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানি রয়েছে। যাদের এক টাকা ধার দিয়ে ফেরত পাচ্ছে না অন্য ব্যাংক বা ফাইন্যান্স কোম্পানি। এ ধরনের অভিযোগ কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যন্ত গড়িয়েছে। ধার পরিশোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপের নজিরও আছে। এছাড়া তারল্য সংকটের কারণে ধার দেওয়ার মতো ব্যাংক ফাইন্যান্স কোম্পানির সংখ্যা কমে গেছে। যেসব সবল ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানি রয়েছে ধার দিতে পারে তারা এখন দুর্বল ব্যাংক বা ফাইন্যান্স কোম্পানিকে ধার দিচ্ছে না। এতে লেনদেন কমেছে।
এদিকে আইএমএফ ঋণের শর্ত হিসাবে বলেছে, ব্যাংকগুলোকে এখন থেকে তারল্য পরিস্থিতি সম্পর্কে আগাম প্রতিবেদন তৈরি করতে হবে। তারল্য ব্যবস্থাপনায় আরও দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তবে ব্যাংকগুলো এখনও সেভাবে দক্ষতার পরিচয় দিতে পারছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, মার্চে আন্তঃব্যাংক লেনদেন হয়েছিল ৬ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকা। এপ্রিলে তা কমে দাঁড়ায় ৬ লাখ ১৭ হাজার কোটি টাকায়। এক মাসের ব্যবধানে এ খাতে লেনদেন কমেছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের নভম্বরে আন্তঃব্যাংকে লেনদেন হয়েছিল ৭ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা। নভেম্বর থেকে এপ্রিল এই ৬ মাসে লেনদেন কমেছে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে মাঝে-মধ্যে লেনদেন বেড়েছে। তবে সার্বিকভাবে লেনদেন কমেছে। ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে এবং ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে লেনদেন বেড়েছে।
ডিসেম্বরে আন্তঃব্যাংকে লেনদেন হয়েছিল ৬ লাখ ৪০ হাজার। নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে ১ মাসের ব্যবধানে লেনদেন কমেছিল ৮১ হাজার কোটি টাকা। জানুয়ারিতে লেনদেন হয় ৭ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারিতে তা কমে দাঁড়ায় ৬ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকায়। জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে কমে, ছিল ১ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। এর কারণ হিসাবে জানা গেছে ওই মাসে কার্যদিবস কম থাকায় লেনদেন কমেছিল বেশি মাত্রায়।