ফাইল ছবি
আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের বিপরীতে বাংলাদেশকে দেওয়া বহুবিৎ শর্তের মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারণের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। এ অবস্থায় সংস্থাটি ডিসেম্বরের মধ্যে রিজার্ভের নতুন লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নিট রিজার্ভ ১৫৩২ কোটি ডলারে উন্নীত করতে হবে।
বর্তমানে নিট রিজার্ভ রয়েছে ১৪৭৯ কোটি ডলার, যা দিয়ে ১ দশমিক ৮ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। রিজার্ভকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমপর্যায়ে উন্নীত করতে হবে। গ্রস রিজার্ভ তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান করতে হলে বাংলাদেশকে আরও দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে। নিট রিজার্ভ তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান করতে হলে অপেক্ষা করতে হবে আরও তিন বছর। অর্থাৎ ২০২৬ সালের জুনে গ্রস রিজার্ভ এবং ২০২৭ সালের জুনে নিট রিজার্ভ তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান হবে।
বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মূল্যায়ন ও আইএমএফ-এর শর্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে সোমবার রাতে প্রকাশিত সংস্থাটির এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, আইএমএফ-এর হিসাবে এখন গ্রস রিজার্ভ ১ হাজার ৮৯৯ কোটি ডলার। এ রিজার্ভ দিয়ে ২ দশমিক ৩ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। নিট রিজার্ভ ১ হাজার ৪৭৯ কোটি ডলার, যা দিয়ে ১ দশমিক ৮ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। অথচ কোনো দেশের রিজার্ভকে নিরাপদ মাত্রায় রাখতে হলে কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান রাখতে হয়। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের রিজার্ভ বেশ কম রয়েছে।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য মানতে নারাজ। তারা বলেছে, দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন নিট ও গ্রস দুই হিসাবেই তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের ওপরে রয়েছে। গ্রস হিসাবে এখন রিজার্ভ ২ হাজার ৫২৩ কোটি ডলার ও নিট হিসাবে ১ হাজার ৯৯১ কোটি ডলার, যা দিয়ে সাড়ে চার মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে।
আইএমএফ বলেছে, আগামী বছরের জুনের মধ্যে গ্রস রিজার্ভ বেড়ে ২ হাজার ৩২৭ কোটি ডলারে উন্নীত হতে পারে। তখন ওই রিজার্ভ দিয়ে আড়াই মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। একই সময়ে নিট রিজার্ভ বেড়ে ১ হাজার ৯৪৭ কোটি ডলারে উন্নীত হতে পারে। এ রিজার্ভ দিয়ে ২ দশমিক ১ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। গ্রস রিজার্ভ ২০২৬ সালের জুনে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান হবে। ওই সময়ে রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়াবে ৩ হাজার ২১৫ কোটি ডলার। নিট রিজার্ভ ২০২৭ সালের জুনে তিন মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান হবে। ওই সময়ে রিজার্ভ বেড়ে হবে ৩ হাজার ৭৭৪ কোটি ডলার।
এদিকে আইএমএফ থেকে চলতি জুন পর্যন্ত নিট রিজার্ভ ধারণের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল ১ হাজার ৭৭৮ কোটি ডলার। ওই সময়ে এ লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না। রিজার্ভ জুন শেষে ১ হাজার ৬৭৩ কোটি ডলারে দাঁড়াতে পারে।
এদিকে আইএমএফ রিজার্ভের নিæমুখী প্রবণতা কমানোর জন্য বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে। এজন্য তারা রেমিট্যান্স বাড়াতে বলেছে। কিন্তু রেমিট্যান্স বাড়লেও আগের বৈদেশিক দেনা শোধ করতে গিয়ে বাংলাদেশ রিজার্ভ বাড়াতে পারছে না। এর মধ্যে গত মাসে রপ্তানি আয় বেশ কমে গেছে।
তবে আইএমএফ মনে করে, বৈদেশিক ঋণের দিক থেকে বাংলাদেশ নিæমানের ঝুঁকিতে রয়েছে। বড় ধরনের কোনো ঝুঁকি নেই।
রিজার্ভ বাড়ানোর পাশাপাশি ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশকে আরও অনেক শর্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। কারণ, ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড় হবে আগামী ডিসেম্বরে। এজন্য শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি মূল্যায়ন করতে নভেম্বরের আইএমএফ-এর আরও একটি মিশন ঢাকায় আসবে। ওই সময়ের মধ্যে ডলারের দাম পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করতে হবে। ঋণের সুদের হারের বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করতে বাজারে টাকার প্রবাহ আরও কমাতে হবে। ফলে মুদ্রানীতিকে আরও সংকোচনমুখী করতে হবে।
ঋণের তৃতীয় কিস্তির অর্থছাড়ের আগে আইএমএফ মিশন বাংলাদেশের অর্থনীতির যে মূল্যায়ন করেছে তাতে দেখা যায়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং ব্যাংক খাতের কয়েকটি শর্ত ছাড়া বাকি সবই বাস্তবায়ন করেছে। রাজস্ব খাত ও সরকারের বিভিন্ন খাতের কিছু শর্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে। এগুলোর অগ্রগতিতে আইএমএফ সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, মৌলিক ১৭টি শর্তের মধ্যে রিজার্ভের ১টি শর্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি। বাকি সব বাস্তবায়ন করেছে। রাজস্ব ও অন্যান্য খাতের ২৬টি শর্তের মধ্যে সবই বাস্তবায়নাধীন।
এর আগে গত বছরের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের অনকূলে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। এর মধ্যে দুটি কিস্তিতে ১১৬ কোটি ডলার ছাড় করা হয়েছে। এখন তৃতীয় কিস্তি বাবদ ১১৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার ছাড় করার প্রস্তাব সোমবার আইএমএফ-এর নির্বাহী পরিষদ অনুমোদন করেছে। অচিরেই এ অর্থ ছাড় হবে। এ অর্থ বাংলাদেশের রিজার্ভে যোগ হবে।