বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার
ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালকদের ক্ষমতা ও জবাবদিহিতা বাড়ল
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:২৯ পিএম
ব্যাংক পরিচালনায় স্বতন্ত্র পরিচালকদের ক্ষমতা ও জবাবদিহিতা বাড়ানো হয়েছে। ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ কোনো অনিয়ম করলে বা বিধি ভঙ্গ করলে স্বতন্ত্র পরিচালককে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে। পর্ষদে তারা কোনো প্রস্তাব উপস্থাপন করলে তা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে। না করলে তা স্বতন্ত্র পরিচালক কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাবেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনো স্বতন্ত্র পরিচালককে অপসারণ করা যাবে না। পদত্যাগ করলে ৭ দিন আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে।
ব্যাংকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বিষয়ে বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই প্রথমবার স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা জারি করল। এর আগে ব্যাংক কোম্পানি আইনের আওতায় স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বিধান করা হয়। এর আওতায় ব্যাংকে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগও করা হয়। কিন্তু তাদের কাজের কোনো জবাবদিহি ছিল না। বাড়তি কোনো ক্ষমতাও ছিল না। বেশির ভাগ ব্যাংকেই স্বতন্ত্র পরিচালক ছিল মূল পরিচালকদের অনুসারী। এবার তাদেরকে আলাদা মর্যাদা দেওয়া হলো।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও পর্ষদের কর্মকাণ্ডের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে স্বতন্ত্র পরিচালকদের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের মাধ্যমে পর্ষদের সার্বিক কর্মকাণ্ড তদারকি করবে।
সার্কুলার অনুযায়ী কোনো ব্যাংকের পর্ষদ ব্যাংক পরিচালনার বিধিবিধান ভঙ্গ করলে স্বতন্ত্র পরিচালক তা লিখিতভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাবেন। স্বতন্ত্র পরিচালক পর্ষদে কোনো প্রস্তাব উপস্থাপন করলে তা গুরুত্বসহকারে আলোচনা করতে হবে। পর্ষদ ওই প্রস্তাবে আলোচনা না করেেল স্বতন্ত্র পরিচালক তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জানাবেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে কোনো স্বতন্ত্র পরিচালকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনো স্বতন্ত্র পরিচালককে অপসারণ করা যাবে না। কোনো স্বতন্ত্র পরিচালক পদত্যাগ করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ৭ দিন আগে জানাতে হবে। আগে এসব বিধান ছিল না। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে, এর মাধ্যমে স্বতন্ত্র পরিচালকদের ক্ষমতা যেমন বাড়বে, তেমনই তাদের কাজের জবাদিহিতাও বাড়বে।
সার্কুলারে বলা হয়, কোনো ব্যাংক বা ব্যাংকসংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতে কোনো স্বার্থ কিংবা দৃশ্যমান স্বার্থের সম্পর্ক থাকলে ওই ব্যক্তি স্বতন্ত্র পরিচলক হতে পারবেন না। ব্যাংকের শেয়ার ধারণ করলে বা ব্যাংকের কোনো শেয়ারহোল্ডারের পরিবারের সদস্যও ওই পদে নিয়োগ পাবেন না। তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষিত ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। কোনো ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা বিমা কোম্পানির পরিচালক কোনো ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক হতে পারবেন না। কোনো ব্যাংকের পর্ষদে পরিচালকের সংখ্যা ২০ জন হলে স্বতন্ত্র পরিচালক হবেন তিন জন। তবে পরিচালক ২০ জনের নিচে হলে স্বতন্ত্র পরিচালকের সংখ্যা হবে দুইজন।
স্বতন্ত্র পরিচালক হিসাবে নিযুক্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ন্যূনতম ১০ বছরের ব্যবস্থাপনা বা ব্যবসায়িক বা পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। বয়স হতে হবে কমপক্ষে ৪৫ বছর এবং সর্বোচ্চ ৭৫ বছর। কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি, ব্যাংকিং, ফিন্যান্স, ব্যবসায় প্রশাসন, আইন, হিসাববিজ্ঞানে øাতক/øাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হতে হবে। স্বতন্ত্র পরিচালকরা প্রতিমাসে স্থায়ী সম্মানি বাবদ ৫০ হাজার টাকা পাবেন। ব্যাংক কোম্পানির পর্ষদ/সহায়ক কমিটির প্রতিটি সভায় উপস্থিতির জন্য সম্মানি হিসাবে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পাবেন। কোনো মাসে ব্যাংক কোম্পানির পর্ষদ ও অন্য সহায়ক কমিটির যত সংখ্যক সভাই অনুষ্ঠিত হোক না কেন, প্রতিমাসে সর্বোচ্চ পরিচালনা পর্ষদের ২টি সভা, নির্বাহী কমিটির ৪টি সভা, অডিট কমিটির একটি সভা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির একটি সভায় উপস্থিতির জন্য এমন সম্মানি পাবেন। এর বাইরে বাড়তি কোনো সভায় উপস্থিত থাকলে তার জন্য সম্মানি পাবেন না।
সার্কুলারে বলা হয়, স্বতন্ত্র পরিচালক থেকে ব্যাংকের অডিট কমিটির চেয়ারম্যান নিয়োগ করতে হবে। তিনি ব্যাংকের পর্ষদ ও সহায়ক কমিটিগুলোর সভায় আমানতকারীদের স্বার্থে সুচিন্তিত মতামত দেবেন। তার মতামতকে গুরুত্বসহকারে পর্ষদকে বিবেচনা করতে হবে।
এছাড়াও ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব যোগ্যতার বিধিবিধান রয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগই স্বতন্ত্র পরিচালকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।