প্রতীকী ছবি
পণ্যের দাম বেশি দেখানো বা ওভার ইনভয়েসিং কমলেও ব্যাপকহারে বেড়েছে পণ্যের দাম কম দেখানো বা আন্ডার ইনভয়েসিং। এতে হুন্ডির মাধ্যমে বড় অংকের অর্থ পাচার হচ্ছে বিদেশে। পাশাপাশি দেশ হারাচ্ছে বিপুল রাজস্ব। ব্যাপক সতর্কতা ও সীমাবদ্ধতার মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর ওভার ইনভয়েসিং নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ মুহূর্তে আন্ডার ইনভয়েসিং নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যাংকগুলোকে কঠোর নির্দেশ দিয়েছে।
বুধবার বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে আয়োজিত ব্যাংকার্স সভায় এ নির্দেশ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা ছাড়াও সব ব্যাংকের এমডিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক সাংবাদিকদের জানান, ওভার ইনভয়েসিং নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনো আন্ডার ইনভয়েসিং হচ্ছে। সে বিষয়টা গুরুত্বসহকারে পর্যবেক্ষণ এবং প্রতিরোধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিপুল অঙ্কের খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন গভর্নর। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ব্যাংক ঋণের ৮ দশমিক ৮০ শতাংশই এখন খেলাপি। গত ডিসেম্বরে এ অঙ্ক ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি ব্যাংক ঋণের একক সুদসীমা উঠিয়ে দিয়েছি এবং সেটা সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে সব ব্যাংক। বৈশ্বিক সংকট এখনো বিদ্যমান থাকায় দেশের মূল্যস্ফীতিতে একটি চাপ রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডলার সংকট। সব মিলিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
এক প্রশ্নের উত্তরে মুখপাত্র বলেন, যেসব ব্যাংক নির্ধারিত রেটের বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে তাদেরকে অবজারভেশনের মধ্যে রেখেছি। নিশ্চয় অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ব্যাংকের এমডিদের সংগঠন- অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এ মুহূর্তে ব্যাংক খাত অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং কিভাবে প্রতিরোধ করা যায় সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন গভর্নর। বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা কমে এলেও ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্টস ব্যালেন্স এখনো ঋণাত্মক। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেটা কিভাবে কমিয়ে আনা যায় তার ব্যবস্থা নিতে বলেছেন তিনি। পাশাপাশি অতিরিক্ত দরে ডলার সংগ্রহ প্রতিরোধ, খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ ভূমিকা এবং ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে।
ব্যাংকগুলো তারল্য সংকটে রয়েছে কিনা জানতে চাইলে এবিবির চেয়ারম্যান বলেন, তারল্য সংকট রয়েছে। তবে সব ব্যাংক নয়, কয়েকটি ব্যাংকে এ সমস্যা। ব্যাংকগুলোকে সংকট নিরসনে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন গভর্নর।
বৈঠক সূত্র জানায়, দেশের বেসরকারি খাতের ১০ ব্যাংকের পর এবার রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংক মিলে ডিজিটাল ব্যাংক গঠন করার উদ্যোগ নিয়েছে। সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী চারটি ব্যাংক মিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনলাইনে ডিজিটাল ব্যাংকের জন্য আবেদন করবে।
এর আগে দেশের বেসরকারি খাতের ১০ ব্যাংক মিলে ডিজিটাল ব্যাংক করার উদ্যোগ নিয়েছে। একসঙ্গে ১০ ব্যাংক মিলে এ ধরনের উদ্যোগ দেশে এখন পর্যন্ত এটিই প্রথম। ডিজিটাল ব্যাংক করার জন্য একসঙ্গে জোট বা কনসোর্টিয়াম গঠন করেছে সেগুলো হচ্ছে- সিটি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি), ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল), ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড (ডিবিবিএল), ট্রাস্ট ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক (এনসিসিবি), মিডল্যান্ড ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংক। ডিজিটাল ব্যাংক গঠনে ১০ ব্যাংকের প্রতিটি সাড়ে ১২ কোটি টাকা করে মোট ১২৬ কোটি টাকা মূলধন জোগান দেবে।
সম্প্রতি দেশে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমতি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদনও আহ্বান করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এ উদ্যোগের পর দেশের বিভিন্ন ব্যাংক, বিমা প্রতিষ্ঠান, মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি খাতের শিল্পপ্রতিষ্ঠান ডিজিটাল ব্যাংক করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
এর আগে চলতি বছরের ২১ জুন ডিজিটাল ব্যাংক গঠনে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ১ আগস্ট পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করা হবে বলে জানানো হয়েছিল। তবে সেই আবেদনের সময় বাড়িয়ে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত করা হয়।