রিজার্ভ গণনার আইএমএফ পদ্ধতি শুরু জুনে, নামবে ২৪ বিলিয়ন ডলারে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৩, ০১:৪২ পিএম
আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন গণনায় বিপিএম৬ পদ্ধতি আগামী জুন মাস থেকে বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জুন মাসে বছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। জুলাই থেকে রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশ করা হবে।
একই সঙ্গে ওই সময়ে ঋণের সুদের হারের সীমা তুলে দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারভিত্তিক সুদ হার নির্ধারণের জন্য একটি মানদণ্ড বেঁধে দেবে। এর সঙ্গে ৩ বা ৪ শতাংশ যোগ করে ঋণের সুদ হার নির্ধারণ করতে পারবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের নীতি সুদ হার নিরূপণের বিষয়ে একটি সুদের হারের করিডোর তৈরি করবে। এর ভিত্তিতে সময়ে সময়ে সুদের হারে পরিবর্তন আনা হবে।
রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অনুষ্ঠিত মানিটারি পলিসি বিষয়ক কমিটির সভায় এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় ডেপুটি গভর্নর, সংশ্লিষ্ট নির্বাহী পরিচালক ও পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানায়, আইএমএফ আগামী জুনের মধ্যে রিজার্ভের নিট হিসাব প্রকাশ করার শর্ত দিয়েছে। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করেছে। প্রথম কিস্তির টাকা হাতে পাওয়ার পর ঋণের শর্ত পালনে আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম৬ বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশ।
আগামী জুলাইয়ে রিজার্ভের প্রকৃত হিসাব প্রকাশ করা হবে। এর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি মডেল তৈরি করছে। বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। এ পদ্ধতিতে রিজার্ভের হিসাব প্রকাশ করলে রিজার্ভ বেশ কমে যাবে। বর্তমানে রিজার্ভ রয়েছে ৩ হাজার ১২৬ কোটি ডলার। এ থেকে বিভিন্ন তহবিলে বিনিয়োগ করা অর্থ বাদ দিলে রিজার্ভ ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে নেমে আসবে। বর্তমান রিজার্ভ থেকে বিভিন্ন তহবিলে ৮০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছিল। ওই বিনিয়োগ থেকে ১০০ কোটি ডলার ইতোমধ্যে কমিয়ে আনা হয়েছে। আরও কমানোর চেষ্টা চলছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের নিজস্ব হিসাবের রিজার্ভের তথ্য এবং আইএমএফের বিপিএম৬ পদ্ধতির হিসাব- দুটির তথ্যই প্রকাশ করবে।
আইএমএফের আরও একটি শর্ত হচ্ছে ঋণের সুদের হারের সীমা তুলে দেওয়া। বর্তমানে সুদের হারের সীমা সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ বেধে দেওয়া আছে। এ সীমা তুলে দিতে হবে আগামী জুনের মধ্যে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করছে। সুদের হারের ওই সীমা তুলে দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি বেঞ্চমার্ক সুদ বা সুদের হারের মানদণ্ড ঘোষণা করবে। এটি নির্ধারণ করা হবে সরকারের বিভিন্ন বন্ডের গড় সুদের হারের ভিত্তিতে। বর্তমানে সরকারের ৫টি প্রধান বন্ডের গড় সুদের হার রয়েছে সাড়ে ৮ শতাংশ। এর সঙ্গে ৩ বা ৪ শতাংশ ব্যাংক যোগ করে আলাদা আলাদাভাবে তারা সুদের হার নির্ধারণ করতে পারবে। তখন সুদের হার ১১ থেকে ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। এর সঙ্গে রয়েছে আরও নানা ধরনের ফি।
বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদের হার নির্ধারণ করে নিজস্ব পলিসি পর্যালোচনা করে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি সুদের হারের করিডোর তৈরি করবে। যার ভিত্তিতে নীতি সুদের হার যেমন ব্যাংক রেট (বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদে ঋণ দেয়), রেপো রেট (কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিক্রি করা ট্রেজারি বিল পুনরায় কিনে নেওয়ার সুদ) ও রিভার্স রেপো রেট নির্ধারণ করবে।
সূত্র জানায়, সুদের হারের এ নীতি পরিবর্তন হবে। বাজারের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে সুদের হার কমবে বা বাড়বে। এ বিষয়গুলো নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন কাজ করছে। আগামী অর্থবছরের জুলাইয়ে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণার সময়ে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন নীতিও ঘোষণা করবে।