জাতীয় শোক দিবস পালন নিয়ে যা বললেন শেখ হাসিনা
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৪, ১০:১৩ পিএম
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি বার্তা দিয়েছেন সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সেই বার্তাটি নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট করেছেন।
মঙ্গলবার রাতে জয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট করা ওই বার্তায় যথাযথ মর্যাদায় ও ভাব গম্ভীর পরিবেশে ১৫ আগস্ট পালনের আহ্বান জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।
জয়ের পোস্ট করা সেই স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘প্রিয় দেশবাসী, আসসালামুয়ালাইকুম, ভাই ও বোনেরা, ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করে। তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। একই সঙ্গে আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা, আমার তিন ভাই মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, কামাল ও জামালের নবপরিণীতা বধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, আমার ছোট ভাই যার বয়স মাত্র ১০ বছর ছিল শেখ রাসেলকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আমার একমাত্র চাচা মুক্তিযোদ্ধা পঙ্গু শেখ নাসের, রাষ্ট্রপতির মিলিটারি সেক্রেটারি ব্রিগেডিয়ার জামিল উদ্দিন, পুলিশ অফিসার সিদ্দিকুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করে।শ্রদ্ধা জানাই মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মনি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, কৃষিমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার ১০ বছরের ছেলে আরিফ ১৩ বছরের মেয়ে বেবি, ৪ বছরের নাতি সুকান্ত, ভাইয়ের ছেলে মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক শহিদ সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে রেন্টুসহ অন্যান্য অনেককে নির্মমভাবে ভাবে হত্যা করে। ১৫ আগস্ট যারা শাহাদাত বরণ করেছেন তাদের সবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং শহিদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
গত জুলাই মাস থেকে আন্দোলনের নামে যে নাশকতা, অগ্নিসন্ত্রাস ও সহিংসতার কারণে অনেকগুলো তাজা প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। ছাত্র, শিক্ষক, পুলিশ এমনকি অন্তঃসত্তা নারী পুলিশ, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক সেবী, কর্মজীবী মানুষ, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, পথচারী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত যারা সন্ত্রাসী আগ্রাসনের শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের প্রতি শোক জ্ঞাপন করছি এবং তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
স্বজনহারা বেদনা নিয়ে আমার মতো যারা বেঁচে আছেন তাদের প্রতি সহমর্মিতা জানাই। আমি এই হত্যাকাণ্ড ও নাশকতার সঙ্গে জড়িতদের যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি।
প্রিয় দেশবাসী, ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু ভবনে যে নারকীয় হত্যার ঘটনা ঘটেছিল সেই স্মৃতি বহনকারী বাড়িটি আমরা দুই বোন বাংলার মানুষকে উৎসর্গ করেছিলাম। গড়ে তোলা হয়েছিল স্মৃতি জাদুঘর। দেশের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে দেশ বিদেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এই বাড়িতে এসেছেন। স্বাধীনতার স্মৃতিবহনকারী এই জাদুঘরটি। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে স্মৃতিটুকু বুকে ধারণ করে আপনজন হারাবার সব ব্যথা বেদনা বুকে চেপে রেখে বাংলাদেশের দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার লক্ষ্য নিয়ে প্রিয় দেশবাসী আপনাদের সেবা করে যাচ্ছি। তার শুভ ফল ও আপনারা পেতে শুরু করেছেন। বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে। আজ তা ধুলিসাৎ হয়ে গেছে। আর যে স্মৃতিটুকু আমাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন ছিল তা পুড়িয়ে ছাই করে দেওয়া হয়েছে। চরম অবমাননা করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি, যার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদা পেয়েছি আত্মপরিচয় পেয়েছি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। লাখো শহিদের রক্তের প্রতি অবমাননা করেছে। আমি দেশবাসীর কাছে এর বিচার চাই।
‘প্রিয় দেশবাসী, আপনাদের কাছে আবেদন জানাই যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে ভাব গম্ভীর পরিবেশে জাতীয় শোক দিবস ১৫ আগস্ট পালন করুন। বঙ্গবন্ধু ভবনে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও দোয়া মোনাজাত করে সবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করুন। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বাংলাদেশের মানুষের মঙ্গল করুন। খোদা হাফেজ।
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।
শেখ হাসিনা।’