শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শহিদ শেখ রাসেলের ৬০তম জন্মদিন উদযাপিত হয়েছে। বুধবার ‘শেখ রাসেল দীপ্তিময়, নির্ভীক নির্মল দুর্জয়’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে নানা আয়োজনে জাতীয়ভাবে দেশব্যাপী ‘শেখ রাসেল দিবস’ উদযাপন করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের অন্য সদস্যের মতো এই নিষ্পাপ শিশুকেও ঠান্ডা মাথায় খুন করে নরপিশাচরা।
আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জন্মদিন উদযাপন করেছে। শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষ্যে বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রী তার ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে সকালে বনানী কবরস্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে তারা কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। তারা কবরে ফুলের পাপড়িও ছড়িয়ে দেন। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ফাতেহা পাঠ করেন এবং শহিদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
এরপর বনানী কবরস্থানে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা প্রথমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, এনামুল হক শামীম, প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, কার্যনির্বাহী সদস্য সাহাবুদ্দিন ফরাজী উপস্থিত ছিলেন।
পরে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠন ও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রদ্ধা নিবেদন করে। শ্রদ্ধা জানায় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবলীগ, মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ স্বেছাসেবক লীগ, মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এরপর বনানীর কবরস্থান মসজিদে শেখ রাসেলসহ ১৫ আগস্টের শহিদদের স্মরণে মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
দিবসটি উপলক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র চত্বরে বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এতে নেতৃত্ব দেন।
ঢাকার বেইলি রোডে শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র প্রাঙ্গণে শেখ রাসেল দিবস উদযাপিত হয়। শেখ রাসেল স্মৃতি প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি ও পার্বত্য সচিব মো. মশিউর রহমান।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ রাসেলের ম্যুরালে শ্রদ্ধাঞ্জলি ও আলোচনা সভা হয়েছে। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে আলোচনা সভা ও বৃক্ষরোপণ করা হয়। বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। বাংলাদেশ শিশু একাডেমিতে শিশুদের অংশগ্রহণে বর্ণিল আয়োজনে উদযাপন করা হয় শেখ রাসেলের জন্মদিন। চট্টগ্রামে বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ে দিনব্যাপী নানা আয়োজনে দিবসটি পালিত হয়েছে। বাংলাদেশ উ›মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাউবি) শিক্ষক ফোরাম এবং সাহিত্য ও সংস্কৃতি মালঞ্চের উদ্যোগে জন্মদিন পালন করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যুবলীগ আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ চত্বরে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। এছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সব বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, ৫০টি ইসলামিক মিশন, ৭টি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি ও মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের গণশিক্ষা কেন্দ্রগুলোয় বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। শেখ রাসেলের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, দোয়া ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে কন্ট্রোলার জেনারেল ডিফেন্স ফাইন্যান্স (সিজিডিএফ)। বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজে আনন্দ র্যালি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ নানা অনুষ্ঠান হয়েছে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনেও যথাযোগ্য দিবসটি পালিত হয়েছে।- বাসস