দুদকে র্যাবের প্রতিবেদন
ত্রাণের চালও চুরি
আনসার ভিডিপির ১৮৩ টন গায়েব
প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০১৭, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রক্ষকই ভক্ষক। প্রবাদ বাক্যটি খাদ্য অধিদফতরের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর ক্ষেত্রে একেবারে প্রযোজ্য। কারণ তারা রক্ষক হয়েও সরকারি চাল আত্মসাৎ করেছেন। বস্তাপ্রতি ১০ থেকে ২০ কেজি পর্যন্ত চাল সরিয়েছেন। ত্রাণের চাল থেকে শুরু করে আনসার-ভিডিপির জন্য বরাদ্দ বিপুল পরিমাণ চাল চুরি করেন। এভাবে চুরি করা টন টন চাল বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা ভাগবাটোয়ারা করেছেন। গড়েছেন অঢেল সম্পদ। নমুনা হিসেবে রাজধানীর তেজগাঁও গুদামে এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা একেবারে হাতেনাতে ধরে ফেলেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ নিয়ে র্যাবের তথ্যবহুল প্রতিবেদনে নামধামসহ বিস্ময়কর সব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, তেজগাঁও গুদামের ন্যায় দেশের খাদ্য গুদামগুলোতে একই কারচুপি হচ্ছে। আর বাস্তবে তাই যদি হয় তবে নীরবে এক ভয়াবহ দুর্নীতি ভর করেছে সরকারের খাদ্য বিভাগে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায় ও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উচিত হবে দ্রুত এ চক্রের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া। যদিও ইতিমধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে র্যাবের পক্ষ থেকে দুদকের মহাপরিচালক বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে।
৫ সেপ্টেম্বর র্যাবের অভিযানে তেজগাঁও খাদ্য গুদামে হাতেনাতে চাল চুরির ঘটনা ধরা পড়ে। গুদামে কর্মরত সাত কর্মকর্তাকে ‘চাল চোর’ হিসেবে চিহ্নিত করে র্যাব। এ ঘটনার পর তেজগাঁও খাদ্য গুদাম থেকে তিন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ঘটনা তদন্তে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এদিকে হাতেনাতে ধরা পড়া ৭ কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়াও তেজগাঁও খাদ্য গুদামে সরকারি চাল চুরির সঙ্গে জড়িত আরও অন্তত ১৫ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সন্দেহভাজন এসব চাল চোরদের অবৈধ সম্পদসহ ব্যক্তিগত নানা বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে জোরেশোরে।
চোরের খাতায় যাদের নাম : র্যাবের অভিযানে তেজগাঁও সরকারি গুদাম থেকে চাল চুরির ঘটনা ধরা পড়ার পর গুদামের ৭ সরকারি কর্মকর্তার মুখোশ খুলে যায়। তাদের বিরুদ্ধে চাল চুরির অকাট্য প্রমাণ মেলে। চাল চুরির টাকায় এদের অনেকে অঢেল সম্পদ গড়েছেন। কেউ কেউ রাজধানীর কয়েকটি এলাকায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে রাজকীয় জীবনযাপন করেন।
র্যাব জানায়, গুদামের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনেকে নিজেরাই চোর সিন্ডিকেটের সদস্য। যাদের অনেকে বছরের পর বছর একই স্থানে কর্মরত। ৭ থেকে ১০ বছরেও তেজগাঁও গুদাম থেকে অন্যত্র বদলি হননি কয়েকজন কর্মকর্তা। বহু বছর একই স্থানে থাকার কারণে তারা শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। কয়েক কর্মকর্তা আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত।
সূত্র জানায়, চাল চোরদের চিহ্নিত করে র্যাবের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন দুদকে পাঠানো হয়। ওই তালিকায় দুর্নীতিবাজদের একটি তালিকাও সংযুক্ত করা হয়েছে। এতে এক নম্বরে আছে খাদ্য কর্মকর্তা নান্নু মিয়ার নাম। তিনি উপ-খাদ্য পরিদর্শক। তার পোস্টিং মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় হলেও বিশেষ সংযুক্তি নিয়ে বর্তমানে তিনি তেজগাঁও খাদ্য গুদামে কর্মরত। প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩ নম্বর গুদামের দায়িত্বে নিয়োজিত এ কর্মকর্তা ওজনে কম দেয়ার মাধ্যমে চাল চুরিতে সিদ্ধহস্ত। তবে তিনি একা নন। সরকারি চালের এ চৌর্যবৃত্তিতে তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী উপ-খাদ্য পরিদর্শক মর্যাদার আরেক কর্মকর্তা। তার নাম মোহাম্মদ হোসেন মামুন। তিনি ১৩ নম্বর গুদামের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তবে এ দুই কর্মকর্তার উপরে আরও বড় চোর আছেন।
র্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, খাদ্য পরিদর্শক পাপিয়া সুলতানা গুদামের ওজন সেতুর দায়িত্বে নিয়োজিত। তাই তাকে বাদ দিয়ে চুরি সম্ভব নয়। পাপিয়া নিজেও চাল চুরিতে সিদ্ধহস্ত। চোর সিন্ডিকেটের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চাল চুরির অভিনব উপায় বের করেন। গুদামের নির্ধারিত ডিজিটাল ওজন সেতু থাকলেও সেটি বেশিরভাগ সময় বিকল করে রাখেন তিনি। এরপর গুদামের পুরনো এবং বিকল অ্যানালগ ওজন সেতুর মাধ্যমে চাল ওজন করা হয়। বিকল মেশিনে ওজনে কম দিয়ে চাল চুরির অভিনব কৌশল রপ্ত করেছেন এ কর্মকর্তা। এভাবে বিকল মেশিনে চাল ওজন তার আরেকটি কৌশলী ফাঁদ। কারণ পরে ওজনে কম দেয়ার বিষয়টি ধরা পড়লে যাতে সোজাসাপ্টা বলে দিতে পারেন- ‘মেশিন নষ্ট থাকায় তিনি বুঝতে পারেননি।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, পাপিয়া সুলতানার পোস্টিং দোহার উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে হলেও তিনি তেজগাঁও খাদ্য গুদাম ছাড়তে রাজি নন। তাই তিনিও সংযুক্তি নিয়ে তেজগাঁওয়ে কর্মরত আছেন। তবে শুধু গুদাম বা ওজন শাখার কর্মকর্তাদের যোগসাজশে চাল চুরি সম্ভব নয়। গুদাম থেকে চাল বের করতে হলে আরও কয়েকটি শাখার সহযোগিতা দরকার হয়। এর মধ্যে ফটক শাখা অন্যতম। তাদের সহায়তা ছাড়া চোরাই চাল গুদাম থেকে বের করা অসম্ভব। র্যাবের তথ্যানুসন্ধানে বেরিয়ে আসে- চাল চোর সিন্ডিকেটে নাম লিখিয়েছেন ফটক শাখার দায়িত্বে নিয়োজিত খাদ্য পরিদর্শক ইউনুছ আলী মণ্ডল। তিনি কাগজপত্রে তারিখ পরিবর্তনের মাধ্যমে চোরাকারবারিদের সহায়তা করেন। ৫ সেপ্টেম্বর দুটি চাল ভর্তি ট্রাক বের হয় রাত ৮টায়। কিন্তু চোর সিন্ডিকেটের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ইউনুছ আলী তার রেজিস্টারে ট্রাক বের হওয়ার সময় লেখেন বিকাল সাড়ে ৪টা। তেজগাঁও খাদ্য গুদামের প্রধান দারোয়ান মো. হারেজও কম যান না। বাইরের চাল চোরাকারবারিদের সঙ্গে গুদামের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগাযোগ ঘটিয়ে দেয়ার দায়িত্ব তার। অর্থাৎ তিনি চোরাই চালের কাস্টমার জোগানদাতা। নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কিছুদিন আগে তাকে তেজগাঁও থেকে অন্যত্র বদলিও করা হয়। কিন্তু তিনি সেখানে যোগদান না করে বহালতবিয়তে আছেন। ওদিকে চাল চুরির পর লুকিয়ে রাখার কাজটি করেন উপ-খাদ্য পরিদর্শক আবু সাঈদ। তিনি তেজগাঁওয়ের ৪ ও ৩৪ নম্বর গুদামের ইনচার্জ।
র্যাব জানায়, কিছুদিন আগে আনসারের জন্য বরাদ্দ চালের একটি বড় অংশ ওজনে কম দেয়ার মাধ্যমে চুরি করা হয়। এ চোরাই চাল রাখা হয় আবু সাঈদের গুদামে। এছাড়া তার অধীনে থাকা দুটি গুদাম পরীক্ষা করে বড় ধরনের অনিয়ম পাওয়া যায়। দেখা যায়, এ দুটি গুদামের নির্ধারিত মজুদের চেয়ে অন্তত ১৫০ টন চাল কম রয়েছে।
সূত্র জানায়, দুদকে পাঠানো তালিকার ৭ নম্বরে থাকা উপ-খাদ্য পরিদর্শক আবদুল কাদের বকসি বিপুল বিত্তবৈভবের সন্ধান পাওয়া গেছে। তিনি ৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে তেজগাঁও খাদ্য গুদামের সবচেয়ে লাভজনক শাখা হিসেবে পরিচিত স্টক শাখায় দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি যথাক্রমে ১ ও ২ নম্বর গুদামেরও ইনচার্জ। র্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবদুল কাদের বক্সি চাল কালোবাজারির সঙ্গে সরাসরি জড়িত। র্যাবের তল্লাশিতে তার অধীনস্থ ১ নম্বর গুদামে ২০ টন চাল কম পাওয়া যায়। অবৈধ উপায়ে তিনি বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন। চাল চুরির অবৈধ টাকায় তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অভিজাত ফ্ল্যাট কেনেন। রাজকীয় আসবাবে ঠাসা এ ফ্ল্যাটে তিনি বিলাসবহুল জীবনযাপন করেন। এমনকি গুদামের ভেতরেও গভীর রাত পর্যন্ত তিনি নানা অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।
যেভাবে ধরা পড়ে চুরি : ঢাকা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবু হোসেন বাবলা তার এলাকার দুস্থ, অসহায় ও দুর্যোগ কবলিত পরিবারের জন্য ত্রাণ হিসেবে সরকারি চালের বরাদ্দ চেয়ে কয়েক মাস আগে আধা সরকারি পত্র (ডিও) দেন। ২৫ অক্টোবর তার ডিওর পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ টন চাল বরাদ্দ দেয় ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর। বরাদ্দ পাওয়ার পর ৫ সেপ্টেম্বর বরাদ্দকৃত চাল আনতে তেজগাঁও খাদ্য গুদামে যান এমপি বাবলার প্রতিনিধি হায়দার আলী। ৩০ টন চাল আছে বলে তেজগাঁও খাদ্য গুদাম থেকে তাকে দুটি ট্রাক বুঝিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু ট্রাকে চালের বস্তা কম দেখে হায়দার আলীর সন্দেহ হয়। তিনি বুঝতে পারেন নির্ধারিত চালের চেয়ে অনেক কম চাল দিয়ে তাকে ট্রাক বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে। একপর্যায়ে তিনি খাদ্য গুদামের কর্মকর্তাদের কাছে তার সন্দেহের কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘প্রতেক্যটি বস্তায় আপনারা চাল কম দিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।’ অভিযোগ পেয়ে ট্রাক দুটি খাদ্য গুদামের ওজন সেতুতে তোলা হয়। দেখা যায় দুটি ট্রাকেই কম চাল রয়েছে। ওজনে কারচুপি ধরা পড়ে যাওয়ার পর গুদামের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দ্রুত বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেন। এজন্য তারা একটি ট্রাকে ৭ বস্তা এবং অপর ট্রাকে ৪ বস্তা করে মোট ১১ বস্তা চাল তুলে দেন। ততক্ষণে গুদাম কর্মকর্তাদের যোগসাজশে চাল চুরির ঘটনা গোপনে র্যাবের কাছে পৌঁছে যায়।
সূত্র জানায়, গোপন সংবাদ আসার পর তাৎক্ষণিক গুদামের বাইরে অবস্থান নেয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে র্যাব-২ এর একটি দল। গুদাম থেকে দুটি ট্রাক বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আটক করে র্যাব। এরপর ট্রাক দুটি গুদামে নিয়ে কাগজপত্র যাচাই করতে শুরু করেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। গুদামের ম্যানেজার হুমায়ুন কবিরকে ডেকে পাঠানো হয়। কিন্তু হুমায়ুন কবির লাপাত্তা। তেজগাঁও খাদ্য গুদামে র্যাবের অভিযানের খবর ততক্ষণে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে একে একে আসতে শুরু করেন খাদ্য অধিদফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে শেষ পর্যন্ত হুমায়ুন কবিরও ঘটনাস্থলে হাজির হন। কিন্তু গভীর রাত হয়ে যাওয়ায় ট্রাক থেকে প্রতিটি বস্তা নামিয়ে ওজন করা সম্ভব হয়নি। রাত সাড়ে ১১টায় জব্দ তালিকা তৈরি করে চালসহ দুটি ট্রাক তেজগাঁও খাদ্য গুদামের ম্যানেজারের জিম্মায় দিয়ে আসে র্যাব। পরদিন দুপুর ২টায় খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ট্রাকের চাল নামিয়ে প্রতিটি বস্তা পৃথকভাবে ওজন করা শুরু হয়।
র্যাব জানায়, বস্তা খুলে ওজন করা শুরু হলে গুদামের কয়েকজন কর্মকর্তা রীতিমতো কাঁপতে শুরু করেন। কারণ প্রায় প্রতিটি বস্তাতেই চাল কম। কোনো বস্তায় ১২ কেজি কোনো বস্তায় ১৪ কেজি, আবার কোনো বস্তায় চাল আছে মাত্র ২০ কেজি। অথচ প্রতি বস্তায় চাল থাকার কথা ৩০ কেজি করে। মোট বরাদ্দ অনুযায়ী দুই ট্রাকে ৩০ হাজার কেজি চাল থাকার কথা। কিন্তু ত্রাণের জন্য বরাদ্দ ৩০ টন চালের প্রায় অর্ধেকই চুরি করেন গুদাম কর্মকর্তারা। প্রতিটি বস্তা ধরে ওজন করতে গিয়ে দেখা যায়, কারচুপির মাধ্যমে গুদামের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ৯ হাজার ৪৯৫ কেজি চাল চুরি করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক র্যাবের একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, চাল চুরির এমন ঘটনা হাতেনাতে ধরা পড়ার পর দুটি ট্রাক জব্দ করা হয়। এরপর কর্তব্যরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গুদামে রক্ষিত বিভিন্ন নথিপত্র পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেন। কয়েকটি কাগজপত্র পরীক্ষা করতে গিয়ে আরও একটি বড়সড় চুরির ঘটনা ধরা পড়ে।
সূত্র জানায়, র্যাবের তল্লাশিতে আনসার ও ভিডিপিকে ২৫৮ টন চাল সরবরাহের একটি রেকর্ড পাওয়া যায়। দেখা যায় ৩, ৩৪ ও ৩৯ নম্বর গুদাম ঘর থেকে এ চাল সরবরাহ করা হয়েছে। গুদামের প্রধান ফটকে রক্ষিত গেট পাস রেজিস্টারেও এ চাল বের হওয়ার তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু আনসারকে এত বিশাল চাল সরবরাহের বিষয়টি নিয়ে র্যাবের সন্দেহ হয়। ঘটনাস্থল থেকেই ২৫৮ টন চাল প্রাপ্তির বিষয়ে আনসার ও ভিডিপির উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করে র্যাব। কিন্তু আনসারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২৫৮ টন নয় তারা মাত্র ৭৫ টন চাল পেয়েছেন। আনসারের জন্য বরাদ্দকৃত চাল সরবরাহে এমন জালিয়াতি ধরা পড়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে র্যাব। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ২৫৮ টন চালের মধ্যে ৭৫ টন দেয়া হলে বাকি ১৮৩ টন চাল কোথায় আছে। কিন্তু এ বিষয়ে উপস্থিত কর্মকর্তাদের কেউই সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে জানা যায়, আনসারের জন্য বরাদ্দকৃত চালের মধ্য থেকে ১৮৩ টন চাল ৩৪ নম্বর গুদামে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। এমন তথ্য পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ৩৪ নম্বর গোডাউনটি সিলগালা করে দেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে তেজগাঁও খাদ্য গুদামের ম্যানেজার হুমায়ুন কবির যুগান্তরকে বলেন, র্যাবের অভিযানের পর মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদফতর থেকে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে খাদ্য পরিদর্শক পাপিয়া সুলতানা, উপ-খাদ্য পরিদর্শক নান্নু মিয়া ও মোহাম্মদ মামুন হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অন্যদের বিষয়েও তদন্ত চলছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, র্যাব যেসব অভিযোগ এনেছে তার সবগুলো সঠিক নয়। গুদামের ভেতর অনৈতিক কাজ ও বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে উপ-খাদ্য পরিদর্শক আবদুুল কাদের বকসি শুক্রবার রাতে যুগান্তরকে বলেন, এসব অভিযোগ মোটেও সঠিক নয়। তবে গুদামের ক্লাবে জুয়া খেলা হয় এমন কথা তিনি বিভিন্ন সময় শুনেছেন। কিন্তু তিনি কখনও এসব কাজে জড়িত ছিলেন না।