Logo
Logo
×

স্বজন সমাবেশ

কৃষিতে সফল গাজীপুর স্বজনের সেই উদ্যোক্তা

Icon

রফিকুল ইসলাম

প্রকাশ: ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৫ পিএম

কৃষিতে সফল গাজীপুর স্বজনের সেই উদ্যোক্তা

ফল ও সবজি চাষ করে সফল গাজীপুর মহানগরীর পূবাইল শাখার যুগান্তর স্বজন সমাবেশের সদস্য ফেরদৌস মিয়া।

পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য এক সময় বাড়ির আঙিনায় পেঁপে চাষ করেন। এরপর বাণিজ্যিকভাবে শুরু করে সফলতা অর্জন করেছেন তিনি। 

এ বছর এলাকায় স্মার্ট কৃষক নামে পরিচিত মুখ ফেরদৌস। মানুষকে কৃষিতে উদ্বুদ্ধ করতে ও চাষাবাদ পদ্ধতি জানাতে গত ২ মাস আগে স্বজনের আরেক সদস্য সাহেদ সরকার রাকিব কে নিয়ে ‘সৌখিন কৃষক’ নামে একটি ইউটিউব আইডি ও ফেসবুক পেজ চালু করেন।

শুরু থেকেই তার আইডিতে লাখ লাখ ভিউ আসতে থাকে। গত এক মাসে তার আইডিতে হয়েছে প্রায় এক লাখ ফলোয়ার। দেশ-বিদেশ মিলিয়ে ভিডিও দেখেছেন প্রায় ৩ কোটি মানুষ। সৌখিন কৃষক আইডিতে গিয়ে দেখা তার পোস্ট করা সর্বশেষ ভিডিওতে রয়েছে ১৬ লাখ ভিউ।

গ্রামের ছেলে ফেরদৌসের বন্ধু-বান্ধব সবাই সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও তিনি বেছে নিয়েছেন কৃষিকাজ। এলাকার সবাই তাকে স্মার্ট কৃষক বলেও ডাকেন।

পড়াশোনা শেষে বাবার সঙ্গে ব্যবসায় যোগ দেন ফেরদৌস মিয়া। এরপর কাজের জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার চিন্তা করেন। কয়েকটি দেশে চেষ্টা করে যেতে না পেরে ২০১৬ সালে নিজের পৈত্রিক জমিতে ১০৫টি পেঁপের চারা লাগিয়ে যাত্রা শুরু করেন কৃষি কাজের। প্রথমবারেই সফল হন ফেরদৌস এবং আয় করেন এক লাখ টাকার বেশি।

এরপর জমির পরিধি ও চারার সংখ্যা বাড়াতে থাকেন। ২০১৭ সালে ৫০০ পেঁপে চারা রোপণ করেন। সেখান থেকে তার আয় হয় ৫ লাখ টাকা। বিভিন্ন প্রতিকূলতা পেরিয়েও ধারাবাহিক ভাবে এর পরিমাণ বাড়তে থাকে।

বর্তমানে ৭ বিঘা জমিতে দুইটি ঘেরের পাড়ে সতেরশো সারি সারি পেঁপে গাছ শোভা পাচ্ছে। প্রতিটি গাছের গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত ঝুলে আছে অসংখ্য পেঁপে। ফেরদৌসের বাগানে কিং, থাই, দেশি চারা, টপ লেডি জাতের পূর্ণবয়স্ক পেঁপে গাছ রয়েছে। প্রতিটি পেঁপে গাছে প্রায় ৩০-৩৫ কেজি পেঁপে ধরে। পাশাপাশি তিনি চাষ করছেন বিভিন্ন জাতের কলা,লাউ,মিষ্টি কুমড়া,কাঁচা হলুদ,মরিচ সহ নানা জাতের শাঁক সবজি।

ফেরদৌস মিয়া এলাকার (মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনায় ফ্রি পেঁপে চারা লাগিয়ে বৃক্ষরোপণে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। উন্নত জাতের এই সব পেঁপে চারা প্রতিবেশীদের বাড়ির আঙ্গিনায় লাগিয়ে নিজেদের প্রয়োজন মেটানোয় উদ্বুদ্ধ করে নজির স্থাপন করেছেন। নিজের ফলানো পেঁপে বিনামূল্যে সবজি হিসেবে এলাকার এতিমখানায়ও দিচ্ছেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া সম্পর্কে ফেরদৌস মিয়া বলেন, আগে থেকেই এলাকার মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি এখন দেশ-বিদেশের মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছি। পাশাপাশি মানুষকে কৃষি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে পারছি। এটাই আমার স্বার্থকতা। অনলাইনে আমার ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর অনেক দেশি-বিদেশি কোম্পানি থেকে গিফট পেয়েছি, নানা ধরনের বীজ পেয়েছি, বিষয়টি খুব উপভোগ করছি কাজের গতিও বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, ৮ বছর আগে এ পথে যাত্রা শুরু। আজকের সফলতার বীজ বপন করেছিলেন আমার বাবা। তার পরামর্শে ও অনুপ্রেরণায় আমি হাল ছাড়িনি। মাঝখানে জাত নির্বাচনে ভুল হওয়ায় পেঁপে চাষে সফলতা আসেনি। ২০১৮ সালে দুষ্কৃতকারীরা আমার পেঁপে বাগান থেকে ৫০০টি চারা কেটে ফেলেন এবং ২০২২ সালে ঝড়ের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তখন আর্থিক ও মানষিক ভাবে ভেঙে পড়ি। এক পর্যায়ে শুভাকাঙ্খীদের সহযোগিতা ও অনুপ্রেরণায় আবার মনযোগী হই পেঁপে চাষে। 

তিনি বলেন, আমি এখন এলাকার বেকার ও শিক্ষার্থীদের পেঁপে চাষে উদ্বুদ্ধ করার জন্য কাজ করছি। একজন শিক্ষার্থী যদি লেখাপড়ার পাশাপাশি মাত্র ২৫টি পেঁপে গাছ লাগায় এবং যত্ন করে তাহলে সেই গাছ থেকে মৌসুমে এক লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। এ ধরণের উদ্যোক্তা থাকলে আমি নিজে সময় ও শ্রম দিয়ে সফলতা অর্জনে সহযোগিতা করব। বাগান করার আগে অবশ্যই জাত নির্বাচন ও সঠিক জাতের চারা রোপন করে পরিচর্যা করলে সফলতা অনিবার্য। এ বছরেও ফলন ভালো হয়েছে সামনে আরও বড় পরিসরে কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে।

রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক, পূবাইল, গাজীপুর।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম