ফাইল ছবি
তীব্র খরা। মাসের পর মাস বৃষ্টি নেই। অথচ বন্যায় ভাসছে দক্ষিণ সুদান। একদিন দুদিন নয়। টানা চার বছর ধরে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের ফলেই প্রকৃতির এই বিরূপ রোষানলে পড়েছে দক্ষিণ সুদান। দেশটির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই ডুবে গেছে। হাজার হাজার মানুষ পানিতে আটকা পড়ে কোনো রকম টিকে আছে। তবে সবচেয়ে করুণ অবস্থা উত্তরের বেন্টিউ শহরে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে আজ যে স্থানটি শুকনো কাল তা পানির তলায়। বুধবার বিশ্ব পানি দিবসে দক্ষিণ সুদানের জনজীবনের এ মানবেতর দৃশ্য তুলে ধরেছে এএফপি।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) গবেষণা মূল্যায়ন এবং পর্যবেক্ষণের প্রধান উইলিয়াম নাল বলেছেন, ‘বেন্টিউ মূলত এখন একটি দ্বীপে পরিণত হয়েছে। রাস্তা-ঘাট ভেসে গেছে। পানি কোথাও বুক সমান, কোথাও হাঁটু পর্যন্ত। প্রধান ফসল শস্য, উদ্ভিজ্জ তেল এবং চিনাবাদামের পেস্ট (যা নল দিয়ে আটকে রাখা পানির মাধ্যমে তৈরি করা হয়) উৎপাদনকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এককথায় এখানকার মতো বন্যার কোনো রেকর্ড দেশটির আর কোথাও নেই।’
সংস্থাটি আরও জানায়, নীল নদের অববাহিকায় অবস্থিত দক্ষিণ সুদানের বেন্টিউয়ের ১০ লাখ মানুষ বছরের পর বছর ধরে পড়ে আছে বন্যার কবলে। দেশের মোট ৭ কোটি ৭০ লাখ মানুষের খাবারের জন্য যথেষ্ট সরবরাহই নেই। লাখ লাখ গবাদিপশু মারা গেছে। আবাদি জমির ১০ শতাংশই পরিণত হয়ে অথই জলাভূমিতে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুদানের কিছু এলাকায় বন্যার পানি বছরের পর বছর এমনকি কয়েক দশক পর্যন্ত কমতে পারে না।
স্থানীয় বাসিন্দা ডুওপ ইয়ান বলেন, মানুষ প্রতিদিন স্থানান্তর হওয়ার চেষ্টা করছে। কারণ দিন দিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে বেন্টিউ। এএফপির একটি স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়, জানুয়ারি যে জায়গাটি শুষ্ক ছিল বন্যা শুরু হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে তা ৩,০০০ বর্গকিলোমিটার (১,১৬০ বর্গমাইল) পর্যন্ত পানিতে তলিয়ে গেছে।
২০ হাজার মানুষের সেবা করে এমন একটি স্বাস্থ্য ক্লিনিকে পরিদর্শন করে এএফপি এক প্রতিবেদনে জানায়, সেখানে মাত্র ১০ জন কর্মী ছিল। এছাড়াও একটি তাঁবুর ভেতরে তিনজন মহিলা একটি একক বিছানা ভাগ করে নিচ্ছিল।
আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপ জানায় (আইসিজি), বন্যায় জমি তলিয়ে যাওয়ার কারণে ঘাস খুঁজে না পাওয়া গবাদিপশু পালকরা তাদের গবাদিপশুগুলো দেশটির দক্ষিণের অঞ্চলগুলোতে নিয়ে যাচ্ছে। সেখানে তারা স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে।
থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সতর্ক করে বলেছে, দক্ষিণ সুদান জলবায়ু বিপর্যয়ের দরুন প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা এবং সহিংসতার চিত্র তুলে ধরে। যারা ধনী দেশগুলোর অর্থনৈতিক সাহায্য ছাড়া বৈশ্বিক উষ্ণায়নের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে না। কিন্তু বর্তমানে অনুদানের অভাব রয়েছে। কারণ ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে সাহায্যের জন্য বাজেট কমিয়ে দিয়েছে ধনীদেশগুলো।