বেইলি রোড ট্র্যাজেডি: লাশের ডিএনএ পরীক্ষায় সময় লাগতে পারে

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৪, ১২:২৫ এএম

রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিনকজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে দুজনের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের হিমাগারে রয়েছে। লাশের ময়নাতদন্ত শেষে সংগ্রহ করা হয়েছে ডিএনএ (ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড)। ডিএনএ পরীক্ষার ফল আসার পরই স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে লাশ। তবে এক্ষেত্রে লাগতে পারে দীর্ঘ সময়। এক থেকে ৬ মাসও লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে সহসাই স্বজনরা বুঝে পাচ্ছেন না লাশ দুটি।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ফরেনসিক ল্যাবে লাশের ডিএনএ পরীক্ষা হচ্ছে। ল্যাব সূত্র বলছে, আলামতের ওপর নির্ভর করে কত সময় লাগবে। তবে পোড়া লাশের ডিএনএ সময়সাপেক্ষ। সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা মাত্র ডিএনএ পরীক্ষার কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। উনাদের (লাশের) রিলেটিভসের ডিএনএ স্যাম্পল নেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কিছু জটিলতা আছে, এজন্য অনেক সময় লাগতে পারে।’
কেমন সময় লাগবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। আলামতের ওপর নির্ভর করে। ব্লাড থেকে আলামত নিলে সময় কম লাগে। তবে দাঁত ও হাড় থেকে সময় বেশি লাগে। আমাদের কাজের প্রচুর চাপ, সক্ষমতারও বিষয়ও আছে। সব মিলে ১ মাসও লাগতে পারে আবার ৬ মাসও লাগতে পারে।
লাশ হস্তান্তরের দায়িত্বে থাকা ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট একেএম হেদায়েতুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ডিএনএ পরীক্ষা শেষে অবশিষ্ট লাশ দুটি স্বজনদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে। টেকনিক্যাল বিষয় হওয়ায় এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কত সময় লাগবে তা বলা যাচ্ছে না।
বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর বেইলি রোডে গ্রিনকজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় ৪৬ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে ৪৪ জনের লাশ হস্তান্তর করা হয়। অবশিষ্ট দুটি লাশের দাবিদার দুই পরিবার। যার একটি রাজধানীর রামপুরার বনশ্রীর বাসিন্দা আলহাজ নজরুল ইসলামের ছেলে নাজমুল হোসেনের বলে দাবি করেছে পরিবার। পরিবারটির দাবি অনুযায়ী ঘটনার সময় নাজমুলরা চার বন্ধু মিলে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে খেতে যান। অন্য লাশটি হলো সাংবাদিক অভিশ্র“তি শাস্ত্রীর। নাজমুল হোসেনের লাশ পুড়ে বিকৃত হলেও অভিশ্র“তির লাশ অক্ষত রয়েছে। অভিশ্র“তির বাবা দাবি করা সবুজ শেখ জানান, নিহতের নাম অভিশ্র“তি শাস্ত্রী নয়, বৃষ্টি খাতুন। তাদের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসার বনগ্রামে। তবে রমনা কালীমন্দির কর্তৃপক্ষ দাবি করে অভিশ্র“তি হিন্দু ধর্মাবলম্বী তার নাম অভিশ্র“তি শাস্ত্রী।
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়–য়া যুগান্তরকে বলেন, ধর্মসংক্রান্ত জটিলতা দেখা দেওয়ায় ওই নারীর লাশের ডিএনএ পরীক্ষার পর আদালতের মাধ্যমে সঠিক দাবিদারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
রোববার দুপুরে ঢামেক মর্গে গিয়ে কথা হয় এক মর্গ সহকারীর সঙ্গে। তিনি জানান, শনিবার লাশ দুটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে পুলিশকে দিয়েছেন। পরে লাশ দুটি মর্গের কোল্ড স্টোরেজে রাখা হয়েছে।
একদিকে স্বজন হারানোর শোক অন্যদিকে লাশ পেতে বিলম্ব হওয়ায় শোকে পাথর দুই পরিবার। নিহত নাজমুলের মা হাসিনা বেগম সন্তানের শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থার মাঝেই ঢামেক হাসপাতালে এসে ডিএনএ নমুনা দিয়ে গেছেন। স্বজনরা জানান, চার ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয় নাজমুল। তিনি মতিঝিল আইডিয়ালের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। সদ্য ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছিলেন। রাজধানীর বনশ্রীতে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন।
নিহত নাজমুল হোসেনের মামা মো. হোসেন যুগান্তরকে বলেন, নাজমুলের মা ও বাবার ডিএনএ নমুনা দেওয়া হয়েছে। আমরা এখন লাশের অপেক্ষায় আছি। প্রতিদিন মর্গে যাচ্ছি। প্রতিনিয়ত পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। রোববারও রমনা থানায় গিয়েছিলাম। কিন্তু কবে লাশ দেবে তা জানি না। আমরা দ্রুতই লাশ বুঝে পেতে সব চেষ্টা করছি। ডিএনএ পরীক্ষার পর ম্যাচিং হলে লাশ হস্তান্তর করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।