বিআইডিএসে গবেষণার ফল প্রকাশ
আর্থিক সুবিধা পেতে রাজনীতিতে ভারতীয়রা

যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আর্থিক সুবিধাপ্রাপ্তি কিংবা সামাজিক ভাবমূর্তি নির্মাণের আকাক্সক্ষা থেকেই ভারতীয়রা রাজনীতিতে যুক্ত হচ্ছে। এককথায় কোনো কিছু পাওয়ার আশা নিয়েই তারা রাজনীতি করছে। দলমত নির্বিশেষে সব রাজনীতিকের মানসিকতা এক্ষেত্রে অভিন্ন। যদিও একাধিকবার নির্বাচনে অংশ নেয়া রাজনীতিবদরা তাদের ‘সামাজিক ভাবমূর্তি’ নিয়ে বিচলিত হন না। তাদের কাছে আর্থিক বা অন্যান্য সুবিধা প্রাপ্তি মুখ্য। অবশ্য নবীন বা নারী রাজনীতিকরা শুরুতে সামাজিক ভাবমূর্তিকেই বেশি গুরুত্ব দেন।
‘হোয়াট মোটিভেইটস পলিটিশিয়ানস? ইভিডেন্স ফ্রম এ ল্যাব ইন দ্য ফিল্ড এক্সপেরিমেন্ট ইন ইন্ডিয়া’ শীর্ষক এক গবেষণায় এসব বিষয় উঠে এসেছে। ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কুনাল সেন এবং তার সহকর্মীরা ভারতের আঞ্চলিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা পঞ্চায়েতের ওপর একটি আচরণগত অর্থনীতির গবেষণা পরিচালনা করেন। রোববার আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) মিলনায়তনে এক সেমিনারে তিনি এ গবেষণার ফল প্রতিবেদন আকারে তুলে ধরেন। বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. কেএএস মুর্শিদ এতে সভাপতিত্ব করেন।
গবেষণায় দেশটির গুরুত্বপূর্ণ দুটি রাজ্য উত্তরপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েতের (ইউনিয়ন পরিষদের অনুরূপ) নির্বাচিত ১০৫ জন রাজনীতিক ও ৬৯ জন সাধারণ মানুষের মানসিকতা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে কুনাল সেন বলেন, তৃণমূল পর্যায়ের সরকার ব্যবস্থার রাজনীতিতে কেউ নিঃস্বার্থভাবে আসেন না। দলমত নির্বিশেষে তাদের প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু পাওয়ার আশা থাকে। সেক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে (এমএলএ) যারা রাজনীতিতে আসেন, তারা কিসের আশায় রাজনীতিতে যুক্ত হন, সে প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই আসে। সাধারণত প্রচুর টাকা-পয়সা খরচ করেই কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে যুক্ত হতে হয়। তবে ব্যতিক্রমও থাকতে পারে। এ বিষয়েও গবেষণা হওয়া উচিত।
গবেষণায় দেখা যায়, রাজনীতিবিদ এবং অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে যদি একটি অর্থনৈতিক সুবিধার গেম খেলা হয়, তখন দেখা যায়, এই দুই দলের মধ্যে আচরণগত তেমন পার্থক্য নেই।
যদিও ধারণা করা হয়, সামাজিক ভাবমূর্তি রাজনীতিবিদদের আরও বেশি ন্যায়সঙ্গতভাবে অর্থনৈতিক বণ্টনে উৎসাহিত করবে।
গবেষণার ফলাফলে এর বিপরীত চিত্র দেখা যায়। যখন অর্থনৈতিক সুবিধা বণ্টনের বিষয়টি লোকজনের কাছে জানাজানি হয়, তখন রাজনীতিবিদদের চেয়ে বরং অরাজনৈতিক ব্যক্তিরাই বেশি ন্যায্য বণ্টন করে। রাজনীতিবিদদের মধ্যে আবার নারী রাজনীতিকরা তাদের সামাজিক ভাবমূর্তির দ্বারা বেশি উৎসাহিত হয়। এ কারণে তারা লোকসম্মুখে অর্থনৈতিক ন্যায্য বণ্টনে পুরুষ রাজনীতিবিদের তুলনায় বেশি উৎসাহিত হন। সামাজিক ভাবমূর্তি বা ইমেজ রাজনীতিবিদের ন্যায়সঙ্গত আচরণে উদ্বুদ্ধ করে না। রাজনীতিবিদরা সাধারণ মানুষের তুলনায় মানসিকভাবে দৃঢ় হয়ে থাকেন। তাই সাধারণ লোকের কথায় প্রভাবিত হওয়ার মানসিকতা থেকে অনেকাংশে মুক্ত। এ কারণে তারা লোক জানাজানির পরও অর্থনৈতিক প্রাপ্তির বিষয়টিকে অগ্রাধিকারে রাখেন।