জাতীয় ঐক্যের তাগিদ
স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে মতভিন্নতার অবকাশ নেই

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বুধবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিয়েছেন দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। এ বৈঠকে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
অন্যদের বক্তব্যেও উঠে এসেছে ঐকমত্যের কথা। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র চলছে। দেশের বিরুদ্ধেও চলছে ষড়যন্ত্র।
এ ষড়যন্ত্র রুখে দিতে সব রাজনৈতিক দলের ঐক্য জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারাও প্রধান উপদেষ্টাকে আশ্বস্ত করেছেন যে, দেশের সার্বভৌমত্ব, অস্তিত্ব, স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষার প্রশ্নে তারা একসঙ্গে আছেন। আমরাও মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর মতাদর্শ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে, তাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে; কিন্তু জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে সবার ঐক্যবদ্ধ থাকা জরুরি।
অতীতে রাজনৈতিক নেতারা মুখে ঐক্যের কথা বললেও বিভিন্ন বক্তৃতা-বিবৃতিতে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ঘায়েল করতেই তৎপর ছিলেন, যার পরিণাম দেশের জন্য ভালো হয়নি।
বস্তুত ঐক্য হলো শক্তির প্রতীক। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার প্রশ্নে গোটা জাতি ছিল ঐক্যবদ্ধ; আর এ কারণেই সম্ভব হয়েছিল আমাদের মহান বিজয় অর্জন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, স্বাধীনতার পর নানা ইস্যুতে দেশ বিভক্ত হয়ে পড়ে। এই বিভক্তি দিন দিন বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতেও জাতি অভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সময় ব্যর্থ হয়।
আর এর সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন বৈদেশিক শক্তি এদেশের ক্ষমতাসীনদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করে নেয়। এ পরিস্থিতিতে অন্তত জাতীয় ইস্যুগুলোতে ঐকমত্য জরুরি হয়ে পড়েছিল। আশার কথা, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সেই সুযোগ তৈরি হয়েছে এবং প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন।
আমরা জানি, অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। এগুলো মোকাবিলার জন্য এবং যদি কোনো বহির্শক্তি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায় অথবা দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায়, তাদের প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের অবশ্যই জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। জাতীয় নির্বাচন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নির্ধারণসহ বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলো ও ছাত্র আন্দোলনকারীদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে।
এসব মতপার্থক্যের অবসান ঘটিয়ে সবাইকে অভিন্ন সিদ্ধান্তে আসতে হবে। প্রশ্ন হতে পারে, কীভাবে এই জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠবে? জাতীয় ঐক্য গড়তে শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটা জাতীয় সভা ডাকার কথা বলছেন অনেকে। আবার কারও কারও মতে, জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার বিষয়ে একটি রূপরেখা তৈরি করা যেতে পারে।
তবে আমরা মনে করি, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র এবং জনগণ ও সম্পদের নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো মতভিন্নতার অবকাশ নেই। এগুলো অভিন্ন স্বার্থের বিষয়। এক্ষেত্রে কোনো রূপরেখা বা পরিকল্পনার প্রয়োজন হয় না। এসব প্রশ্নে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে দৃঢ় অবস্থান ধরে রাখতে হবে।
সেই সঙ্গে সতর্ক থাকতে হবে, দেশে যেন এমন কোনো অবস্থার সৃষ্টি না হয়, যা থেকে জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভাজন তৈরি হয়।