
প্রিন্ট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৭ এএম
গ্রামীণফোনের নতুন প্রকল্পে চাকরি হারাবে ৬০০ স্থায়ী কর্মী

যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৩:৪১ পিএম

ফাইল ছবি
আরও পড়ুন
দেশের বৃহত্তর মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন একটি নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। সাধারণ সরবরাহ কেন্দ্র (সিডিসি) নামে প্রকল্পটির কার্যক্রম চালু করার প্রক্রিয়াও ইতিমধ্যে শুরু করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রকল্পটি কার্যকর হলে অপারেটরটির ৬০০ স্থায়ী কর্মীকে চাকরি হারাতে হবে। চাকরি খোয়াতে যাওয়া এসব কর্মীর বেশিরভাগই টেকনোলজি টিমের সদস্য।
এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে গ্রামীণফোনের কর্মী এক-চতুর্থাংশ কমে আসবে এবং ইউনিয়নও বন্ধ করে দেয়া হবে। গ্রামীণফোন সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ প্রকল্পের অধীনে প্রযুক্তিগত ও নেটওয়ার্ক-সম্পর্কিত পরিষেবাগুলো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করবে টেলিকম অপারেটরটি।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ সম্পর্কে জানাতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে একটি জ্ঞাপনমূলক চিঠিও দিয়েছে গ্রামীণফোন।
নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে চিঠি দেয়া ছাড়াও সিডিসি প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্ভাব্য পরিষেবা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক কোটেশন আহ্বান (আরএফকিউ) করা হয়েছে।
বিটিআরসির এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কমিশনের নীতিমালার সঙ্গে এই টেলিকম অপারেটরের উদ্যোগ যাবে কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখতে গত সপ্তাহে নিজের আইন ও লাইসেন্স বিভাগের কাছ থেকে আইনি মতামত চেয়েছে বিটিআরসি।
জিপির সিডিসি প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্পর্কে অবগত থাকার কথা জানিয়ে বিটিআরসির কমিশনার রেজাউল কাদের শুক্রবার গণমাধ্যমকে বলেন, আগামী সপ্তাহে বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখা হবে।
গ্রামীণফোনের কর্মীরা বলছেন, ইউনিয়ন থাকার কারণে তাদের ছাঁটাই করতে পারছে না। তাই ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে অপারেটরটি। টেকনোলজির এই টিম সবচেয়ে শক্তিশালী। তাদের বাদ দিলেই ইউনিয়ন বন্ধ হয়ে যাবে।
গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর জিপির ভারপ্রাপ্ত কর্পোরেটবিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা হোসেইন সাদাত এক বিবৃতিতে টেলিকম নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে সিডিসি প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যাপারে জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, বেশ কিছু পরিষেবার জন্য এ সংক্রান্ত বিশ্বের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের কাছে কোটেশন আহ্বান করা হয়েছে, যাতে মূল্যবান গ্রাহকদের আমরা আধুনিক ও ভবিষ্যৎ উপযোগী সেবা দিতে পারি।
এ বিষয়ে জিপি একটি অনুকরণীয় মডেল চাইলেও এখন পর্যন্ত তা নির্ধারণ করতে পারেনি। প্রতিষ্ঠানটি বলছে- স্বয়ংক্রিয়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, যন্ত্রপঠন প্রযুক্তি এবং বিশ্লেষণধর্মী, গ্রাহককেন্দ্রিক পরিকল্পনা ও আশাপ্রদ ভবিষ্যৎ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলাই তাদের প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
চিঠিতে টেলিকম অপারেটরটি বলছে, তাদের উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- ফোরজি ও ফাইভজি প্রযুক্তির সর্বোচ্চ মানের ভয়েস ও ডেটা সার্ভিস নিশ্চিত করা। এতে প্রতিষ্ঠানটির কিছু কর্মীকে ঘরোয়া থেকে আউটসোর্সিং মডেলে স্থানাস্তর করা হবে।
আউটসোর্সিং মডেল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে জিপির পিপলস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মিয়া মোহাম্মদ শফিকুর রহমান মাসুদ বলেন, অন্য প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তিগত ও নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনা সেবা ব্যবহার করে সর্বোচ্চ মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে সিডিসি প্রযুক্তি গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা জিপির সব কর্মী ফাইভজি সেবা শুরুর মতো নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পারি। এই একই মানবসম্পদ দিয়ে থ্রিজি ও ফাইফজি শুরু করে আমরা সফল হয়েছি।
জিপির কর্মচারী প্ল্যাটফর্মের এই চেয়ারম্যান বলেন, যখন জিপির অধীনে কাজ করছি, তখন টেলিনরের অন্যান্য ব্যবসায়ও কাজ করতে প্রস্তুত আমরা। যদিও এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়, তবে ৬০০ স্থায়ী কর্মীর চাকরি খাবে এটি।
গত বছরের অক্টোবরে গ্রামীণফোনের কর্মচারী ইউনিয়নের (প্রস্তাবিত) প্রেসিডেন্ট ফজলুল হক ও মহাসচিব মিয়া মোহাম্মদ শফিকুর রহমান মাসুদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে সিডিসি প্রকল্প বন্ধে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।
জিপি কর্মচারী ইউনিয়ন জানিয়েছে, সর্বোচ্চ লাভের আশায় ২০০৮ সাল থেকে জনবল ছাঁটাই করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আসছে জিপি।
জানা গেছে, ২০১২ সালেও গ্রামীণফোনে সাড়ে পাঁচ হাজার কর্মী ছিল। যত বছর গড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানের আয় বেড়েছে। ঠিক উল্টো দিকে গত পাঁচ বছরে তিন হাজারের বেশি কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়মিত কর্মী আছে ২ হাজার ৪০০ জন।
জিপি কর্মকর্তারা বলেন, সিডিএস প্রকল্পের আওতায় ছাঁটাইয়ের আশঙ্কায় আরও ১০০ পূর্ণকালীন কর্মী স্বেচ্ছায় অবসরে গেছেন।
এসব সত্ত্বেও টেলিকম নিয়ন্ত্রণ সংস্থাকে দেয়া চিঠিতে জিপি দাবি করছে, অপারেটিং মডেলে যে কোনো পরিবর্তন আনলেও টেলিনর ও জিপি তাদের কর্মীদের সর্বোচ্চ বিবেচনায় রাখে বলে সুনাম রয়েছে। কাজেই এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটবে না।
কোনো পরিষেবা প্রতিষ্ঠানকে বাছাই করা হলে তাদের দায়িত্ব গ্রহণের ক্রান্তিকালীন আগে কোনো কর্মী আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় আগাম যোগাযোগ করলে বৈশ্বিক কাঠামো চুক্তি অনুসারে প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে জনবান্ধব প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করা হয়েছে। এ সময়ে তাদের কর্মীদের একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চাকরির নিশ্চয়তা রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে যুগান্তরের পক্ষ থেকে গ্রামীণফোনকে ই-মেইল করা হয়েছিল। জবাবে মোবাইল অপারেটরটি জানায়, অত্যাধুনিক নেটওয়ার্ক ব্যবস্থাপনা দক্ষতা ও প্রক্রিয়া উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিকল্প উপায় যাচাই করে দেখছে গ্রামীণফোন। উন্নত নেটওয়ার্ক ও গ্রাহক অভিজ্ঞতায় শীর্ষস্থান বজায় রাখার ক্ষেত্রে এ উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিষ্ঠানটির দাবি, বৈশ্বিকভাবে ব্যবসার বিবর্তন মডেলের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই কৌশলগতভাবে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যদিও বিষয়গুলো এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে এমন কোনো সিদ্ধান্তও নেয়া হয়নি।
দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রামীণফোন সবসময়ই কর্মীদের ব্যাপারে যত্নশীল এবং এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে বলে জানিয়েছে এ টেলিকম অপারেটরটি।
গ্রামীণফোনের মিডিয়াপ্রধান সৈয়দ তালাত যুগান্তরকে বলেন, কর্মীদের চাকরি হারানোর ঝুঁকি নেই।
আগের বছরের তুলনায় ২০১৮ সালে জিপির নিট লাভ বেড়েছে ২৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ বা ৭৭৪ কোটি টাকা। ২০১৭ সালে টেলিকম অপারেটরটির মুনাফা বেড়েছে ২১ দশমিক ৭৩ শতাংশ।
গত বছরে তাদের মুনাফা ছিল তিন হাজার ৫২০ কোটি টাকা। আর নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ২৭৪২.৩ কোটি টাকা।