সোনার বাংলা গড়তে আরও সোনার ছেলে চাই : প্রধানমন্ত্রী
বাসস
প্রকাশ: ০৬ মে ২০১৮, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
গণভবনে রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ২০১৮ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলের পরিসংখ্যান হস্তান্তর করা হয় যুগান্তর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সমাজের সর্বস্তরে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই হল দেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত। সমাজে শান্তি নিশ্চিত করতে সবাইকে ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, একদিন বাংলাদেশ বিশ্বে একটি উন্নত দেশ হিসেবে স্থান করে নিতে সক্ষম হবে।
কেননা লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা কখনও ব্যর্থ হতে পারে না। রোববার সকালে গণভবনে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য শিক্ষার হার শতভাগে উন্নীত হওয়া জরুরি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামীতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে বাংলাদেশের আরও অনেক সোনার ছেলের প্রয়োজন রয়েছে।
দেশের শিক্ষা খাতের উন্নয়নে তার সরকারের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বৃত্তি-উপবৃত্তি প্রদান করছে। প্রধানমন্ত্রী এ বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান।
এ ছাড়া বান্দরবান ও বরিশালের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশেষ করে পার্বত্য জেলাগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য তার সরকারের আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন।
দেশের সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার প্রসারে আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কে পাহাড়ি কে বাঙালি এটা আমাদের কাছে কোনো বিবেচ্য নয়, আমরা প্রত্যেকের শিক্ষা ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে চাই।
এ সময় সব স্কুলে মিড ডে মিলের ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি তিনি আহ্বান জানান। এর আগে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন।
পরে ১০টি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা পৃথকভাবে স্ব স্ব শিক্ষা বোর্ডের ফলাফলের কপি প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। এ বছর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ মার্চ সারা দেশে মাদ্রাসা ও কারিগরিসহ ১০টি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় সারা দেশে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
শিক্ষা ব্যবস্থায় কৃষিবান্ধব সম্পৃক্ততার বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এমন এক ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যেখানে শিক্ষার্থীরা বিদ্যার্জন শেষে নিজেদের কৃষিকাজে সম্পৃক্ত করতে অনীহা প্রকাশ করবে না।
বরং ফসল কাটার মৌসুমে মাঠে কাজ করার সুযোগ থাকবে। তিনি বলেন, শিক্ষিত হলে অনেকে আবার ক্ষেতে নামতে চায় না। এজন্য ধান কাটা মৌসুমে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিশেষ করে কলেজের ছেলেদের ক্ষেতে নামানো যায় কিনা সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ১৯ জেলার ৬৩টি উপজেলায় পাঁচ লাখ পরিবারের মাঝে পাঁচ লাখ পারিবারিক সাইলো বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে তিনি একথা বলেন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় খাদ্য সংরক্ষণের জন্য ঝালকাঠি জেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের অর্থনীতিটা কৃষিভিত্তিক। এ অর্থনীতিটাকে আমাদের ধরে রাখতে হবে, খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। এটা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে।
কৃষি কাজটাকে যান্ত্রিকীকরণ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ জন্য আমরা শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। তিনি বলেন, কেউ যেন কৃষিকাজে বিমুখ না হয়। আর শিক্ষিত হয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা আরও ভালোভাবে কৃষিকাজ করতে পারে, বাপ-মাকে সাহায্য করতে পারে। সেভাবে তাদের মানসিকতাটাকে গড়ে তুলতে হবে। সেটাও আমাদের শিক্ষার সঙ্গে থাকা উচিত।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব সাহাবুদ্দিন আহমেদ অনুষ্ঠানে ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে পারিবারিক সাইলোর বিভিন্ন ব্যবহারিক দিক তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাজী আবদুল ওয়াদুদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ঝালকাঠির জেলা প্রশাকের কার্যালয়ে উপস্থিত প্রকল্পের অনেক উপকারভোগী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
ফুড গ্রেড প্লাস্টিকের তৈরি মটকা সদৃশ্য এ পারিবারিক সাইলোতে দুর্যোগপ্রবণ সময়ে বিশেষ করে সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস ও বন্যায় বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য- ধান, চিড়া, মুড়ি, ফসলের বীজ সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। সাইলোগুলোকে মাটির নিচে পুঁতে বা গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখেও খাদ্যের গুণাগুণ রক্ষা করে এখানে খাদ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।