নিঃশর্ত ক্ষমায় মুক্ত আনোয়ার ইব্রাহিম
‘মালয়েশিয়ায় নতুন ভোরের সূচনা হয়েছে’
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ মে ২০১৮, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
নিঃশর্ত ক্ষমা পাওয়ার পর মালয়েশিয়ার কারাবন্দি নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম মুক্তি পেয়েছেন। দেশটির সাধারণ নির্বাচনে বিরোধী জোট পাকাতান হারাপানের অভূতপূর্ব বিজয়ের সপ্তাহখানেক পর ওই জোটের অন্যতম প্রধান এ নেতা মুক্তি পেলেন। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের যে হাসপাতালে বন্দি অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন, বুধবার সেখান থেকে আনোয়ারকে মুক্তি দেয়া হয়।
এএফপি জানায়, সমকামিতার অভিযোগে দণ্ড ভোগ করা ৭০ বছর বয়সী আনোয়ার অনেক দিন ধরেই কাঁধের আঘাতের চিকিৎসা নিতে পুলিশ প্রহরায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। মুক্তি পাওয়ার পর সেখান থেকে হেঁটে বের হয়ে আসার সময় পিপলস জাস্টিস পার্টির (পিকেআর) ৭০ বছর বয়সী এ শীর্ষ নেতাকে ঘিরে ধরেন পরিবারের সদস্য, আইনজীবী ও কারারক্ষীরা। এ সময় আনোয়ার বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় এক নতুন সূর্যোদয় ও নতুন ভোরের সূচনা হয়েছে। এজন্য মালয়েশিয়ার জনগণকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পুরো মালয়েশিয়া গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। পরিবর্তনই তাদের একমাত্র কাম্য।’
সমর্থকদের দিকে স্মিত হাস্যে হাত নেড়ে অভিবাদন জানানোর সময় আনোয়ারের পরনে ছিল কালো স্যুট, সাদা শার্টের সঙ্গে টাই। হাসপাতাল থেকে বের হয়েই সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত এ নেতা গাড়িতে উঠে রাজা পঞ্চম সুলতান মুহাম্মদের সঙ্গে দেখা করতে তার রাজপ্রাসাদের দিকে রওনা হন। গত সপ্তাহের নির্বাচনে একক দল হিসেবে সবচেয়ে বেশি আসন জিতে নেয় পাকাতান হারাপান জোটের প্রভাবশালী অংশীদার পিকেআর। এ কারণে ফল ঘোষণার পর থেকেই কারাবন্দি আনোয়ারের মুক্তি নিয়ে জল্পনা শুরু হয়।
মেয়ে নুরুল ইজ্জাহ এর আগে মঙ্গলবার তার বাবাকে মুক্তি দেয়া হতে পারে বলে জানান। মঙ্গলবার জেল থেকে তার মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও পরে তা স্থগিত করা হয়। বুধবার সকালে রাজকীয় ক্ষমা বোর্ডের মিটিংয়ে আনোয়ারের ক্ষমার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। বুধবার সকালে রাজপ্রাসাদ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কুয়ালালামপুর, লাবুয়ান ও পুত্রজায়ার কেন্দ্রীয় অঞ্চলভুক্ত ক্ষমা বোর্ডের সুপারিশে রাজা ইয়াং ডি-পারতুয়ান আগং আনোয়ার বিন ইব্রাহিমকে নিঃশর্ত ক্ষমার ঘোষণা দিয়েছেন এবং তাকে তাৎক্ষণিক মুক্তি দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।’ এরপরই হাসপাতাল থেকে তাকে মুক্তি দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
নিঃশর্ত ক্ষমা পাওয়ায় পিকেআরের এ শীর্ষ নেতার রাজনীতিতে ফেরার ক্ষেত্রে আর কোনো বাধা রইল না। রয়টার্স জানায়, রাজপ্রাসাদে আনোয়ারকে স্বাগত জানান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ। ২০০৪ সালে মাহাথিরই সমকামিতা ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আনোয়ারকে উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করে কারাগারে পাঠিয়েছিলেন। ছয় বছর কারাভোগের পর মুক্তি পাওয়া আনোয়ারকে ২০১৫ সালে আবারও একই অভিযোগে কারাগারে পাঠান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক।
২০ বছর আগে মাহাথিরকে ক্ষমতা থেকে নামাতে পাকাতান হারাপান আন্দোলন শুরু করেছিলেন আনোয়ার। শেষ পর্যন্ত মাহাথির-আনোয়ার জোটই দেশটির রাজনীতির ইতিহাস পাল্টে দিল। জালিয়াতির মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠা নাজিবকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামাতে একসময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী আনোয়ারের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন করেন মাহাথির। ২২ বছর মালয়েশিয়া শাসনের পর দেড় যুগ আগে বয়সের কারণে রাজনীতিকে বিদায় জানানো মাহাথির দুর্নীতি দমনের প্রতিশ্র“তি দিয়ে আবারও রাজনীতিতে ফেরেন।
গত সপ্তাহের নির্বাচনে পাকাতান হারাপান (অ্যালায়েন্স অব হোপ) পার্লামেন্টের ২২২ আসনের মধ্যে ১১৩টি জয় পেয়ে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। নাজিবের মালয়েশিয়ান বারিসান ন্যাসিওনাল (বিএন) জোট ৭৯টি আসন ধরে রাখতে সক্ষম হয়। নির্বাচনে জয়লাভ করে নিজের সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী আনোয়ারকে কারামুক্তির আবেদন করার প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন মাহাথির। দুই বছরের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিয়ে আনোয়ারকে ওই পদে বসানোর পথ মসৃণ করারও আশ্বাস দিয়েছেন ৯২ বছর বয়সী মাহাথির।
আনোয়ারের এ মুক্তি জোট মন্ত্রিসভার পদবণ্টন নিয়ে চলা উত্তেজনা নিরসনে ভূমিকা রাখবে বলেও ধারণা পর্যবেক্ষকদের। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মাহাথিরের শপথের পর থেকেই মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ পদ নিয়ে তার ও আনোয়ার সমর্থকদের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। জোটের শীর্ষ নেতা মাহাথির হলেও আনোয়ারের অবস্থান কী হবে- এ নিয়েও দুই পক্ষের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। মুক্তি পাওয়া আনোয়ার ও মাহাথির মিলে এসব সংকটের সমাধান করতে পারবেন বলে প্রত্যাশা সমর্থকদের।